লেবুর খোসা খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা
লেবু এমন একটি ফল যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম আছে। এই লেবু খেলে শরীরের হাড় শক্ত ও মজবুত হয়। এছাড়াও লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড এবং এই লেবুর খোসাতে রয়েছে সাইট্রাস বায়ো ফ্লেভোনয়েড যা মানসিক পেশার কমাতে সাহায্য করে থাকে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ লেবুর খোসা খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা
- লেবুর খোসা খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা
- লেবুর প্রকারভেদ ও সেইগুলোর নাম সমূহ
- লেবুর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
- লেবু খাওয়ার কিছু অপকারিতা সমূহ
- অতিরিক্ত লেবু খাওয়া থেকে সাবধানতা
- মন্তব্য
লেবুর খোসা খেলে কি হয়
লেবুর খোসা খাওয়ার পরে অনেকের মুখের স্বাদ বা জিহব্বার স্বাদ তেঁতো মনে হবে। প্রথম প্রথম আপনি হয়তোবা লেবুর খোসা ঠিকমতো খেতে পারবেন না। আপনার কাছে তেঁতো আর টক মনে হবে। কিন্তু বিশ্বাস করেন আপনি যদি নিয়মিত চেষ্টা করেন আপনি একসময় এই লেবু ছাড়া খাবার খেতেই বসবেন না। এই লেবুই আপনার প্রিয় হয়ে উঠবে খাবার খাওয়ার জন্য। একবার ভাবুন তো, যদি কোন দিন শুনেন যে কোন ব্যক্তি লেবুকে এতোটাই ভালোবাসে যে লেবুর গন্ধ পেলেই সে কিছু খাবার খেয়ে ফেলে, তাহলে লেবু দিয়ে হলে সে কি পরিমাণে খেতে পারে!
লেবুর প্রকারভেদ ও সেইগুলোর নাম সমূহ
লেবুর প্রকারভেদ ও সেইগুলোর নাম সমূহ হয়তো সবগুলো সঠিক ভাবে বলা সম্ভব না কারো পক্ষ্যেই। এর কারণ হলো বর্তমানে বিভিন্ন রকমের লেবুর জাত উদ্ভাবন করেই চলেছে। বর্তমানে কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) এর মতে লেবুকে মৌসুম ভেদে ৩ প্রকারে ভাগ করা যায়। এইগুলা হলো বারি-১, বারি-২, বারি-৩। যদি জাত উল্লেখ করতে যায় তাহলে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রকম জাত পাওয়া যাবে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি লোকাল কিছু জাতের নাম বলি তাহলে বলা যায়, দেশী লেবু, বাতাবি লেবু ও কাগজি লেবু।
এই তিন ধরনের লেবুই প্রধানত বাজারে পাওয়া যায়। যেইগুলোকে আমরা বাজার থেকে সংগ্রহ করি অনেকেই আবার নিজ বাসায় চাষ করে থাকেন। এই লেবু যেহেতু বাসার আঙ্গিনায় বা উঠানে, বাসার ছাদে টবে করে বিভিন্ন ভাবে চাষযোগ্য একটি ফল। যার কারণে অনেকেই নিজ বাসায় এই লেবু চাষ করেই চাহিদা মিটিয়ে থাকে। লেবু চাষের জন্য হালকা দোঁআশ মাটিতে বা অম্লীয় মাটিতে লেবুর চাষ ভালো হয়ে থাকে।
লেবুর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
লেবুর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার কথা আসলেই বলা যায় লেবু এমন একটি ফল যেইটাতে অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর। গরমে যখন তীব্র তাপদাহ থাকে তখন শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে যায় আবার যখন অতিরিক্ত গরমে শরীর থেকে অনেক ঘাম ঝরে তখন যদি এক গ্লাস লেবুর শরবত খাওয়া যায় তাহলে শরীর অনেক চাঙ্গা লাগে এবং সেই সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বড় কথা যদি সেই শরবত ঠান্ডা পানির হয়ে থাকে তাহলে তো আর কোন কথাই থাকে না।
লেবুর রস বা খোসা খেলে আমাদের শরীরের টক্সিন বের করতে সাহায্য করে থাকে। সেই সাথে এর ককার্যকারী গুণাগুণ আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে। শরীরের চর্বি কমিয়ে ওজনকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ফাইবার এবং এন্টিব্যাকটেরিয়া ও এন্টিভাইরাল উপাদান। যার ফলে মৌসুমি নানা সংক্রমক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। যেমন- ঠান্ডা, কাঁশি, সর্দি , ইনফ্লুয়েঞ্জার এইসব রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
এছাড়াও লেবু আমাদের পেটের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে বদ হজম থেকে রক্ষা করে। লেবুতে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম থাকায় উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও আরো বেশ উপকারিতা রয়েছে যেইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু উপকারিতা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
- দ্রুত ক্ষত সারায়ঃ লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি ক্ষতস্থান দ্রুতসারাতে সাহায্য করে। হাড়, তরুনাস্থি ও টিস্যুর স্বাস্থ্য ভাল রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় লেবুর মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সর্দি-কাশির সমস্যা দূর করে। স্নায়ু ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়। ফুসফুস পরিষ্কার করে হাঁপানি সমস্যার উপশম করে।
- হজমে সাহায্য করেঃ লেবুর রস শরীর থেকে টক্সিন দূর করে। বদহজম, বুক জ্বালার সমস্যাও সমাধান করে লেবু পানি। নেই সঙ্গে পরিপাক নালীথেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। এটি কোষ্ঠ্যকাঠিন্যও দূর করে।
- ত্বক পরিস্কার করেঃ লেবুতে ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক এসিড রয়েছে। এই রস শুধু ত্বকের তেলতেলে ভাবই দূর করে না, সেই সঙ্গে ত্বককে উজ্জ্বল করে দেয়। তাছাড়া লেবুর রস বয়সের বলিরেখা দূর করতে দারুণ কার্যকর।
- শক্তি বৃদ্ধি করেঃ লেবুর রস পরিপাক নালীতে প্রবেশ করে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে। এটি মানসিক চাপ কমাতে ও মেজাজ ফুরফুরা করতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- ওজন কমায়ঃ লেবুতে থাকা পেকটিন ফাইবার খিদে কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা খালি পেটে লেবুর রস খায়, তাদের ওজন দ্রুত হ্রাস পায়। সুতরাং ওজন বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তা না করে প্রতিদিন সকালে লেবুর রস যদি খাওয়া যায় তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
- কিডনির পাথর দূর করেঃ লেবুতে উপস্থিত সাইট্রিক অ্যাসিড কিডনিতে ‘ক্যালসিয়াম অক্সালেট’ নামক পাথর গঠনে বাধা দেয়। সাধারণ কিডনি পাথরগুলোর মধ্যে এটি একটি।
- পেট পরিষ্কার রাখেঃ শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকারক পদার্থ বের করতে সাহায্য করে লেবু পানি। ফলে ইউরিনেশন ভালো হয় এবং লিভার ভালো থাকে।
- লিভার পরিষ্কার রাখেঃ লেবুতে বিদ্যমান সাইট্রিক অ্যাসিড কোলন, পিত্তথলি ও লিভার থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। ভাইরাসজনিত সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে লেবুর রস।
- মূত্রনালীর সংক্রমণ দূর করেঃ যদি মূত্রনালীতে সংক্রমণ ঘটে। তাহলে প্রচুর পরিমাণে লেবুর রস পান করুন। এটি আরোগ্য লাভে সাহায্য করে।
- চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ লেবুর রস চোখের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ করে এবং চোখের সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করে। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
লেবু খাওয়ার কিছু অপকারিতা সমূহ
তবে যেমন উপকারিতা আছে তেমন এর অপকারিতাও আছে। প্রত্যেকটা বস্তুরই কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। বলা যায় প্রত্যেকটা ভালো কিছুর খারাপ দিকও রয়েছে। লেবু যদি আপনি নিয়মিত পরিমাণ মতো খান তাহলে সেইটা যেমন উপকারে আসবে তেমনি যদি সেইটাকে আপনি আপনার মুখের স্বাদের জন্য অতিরিক্ত হারে খেয়ে থাকেন তাহলে সেই লেবুই আপনার বিভিন্ন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। চলুন তাহলে কিছু কারণ বা সমস্যার কথা জেনা যাক।
- লেবুতে অতিরিক্ত এসিডের কারণে দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়
- মুখমন্ডলের কোষ ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে
- এসিডের মাত্রা বেশি হয়ে যাওয়ার ফলে বমি হতে পারে
- পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা হতে পারে
- ডিহাইড্রেশন হতে পারে
- মাইগ্রেন সমস্যা দেখা দিতে পারে
- রক্তে আয়রণের উপস্থিতি বেড়ে যেতে পারে
অতিরিক্ত লেবু খাওয়া থেকে সাবধানতা
অতিরিক্ত লেবু খাওয়া থেকে সাবধানতার কথা একবার ভাবুন তো, আপনি যদি অতিরিক্ত লেবু খেয়ে থাকেন তাহলে এতোগুলো সমস্যা আপনার অজান্তেই আপনি সঙ্গী হিসেবে করে নিলেন। তাহলে আপনি যদি অতিরিক্ত লেবু প্রেমি হয়ে থাকনে আশা করি আজকের এই পোস্টটি পড়ার পরে আর অতিরিক্ত লেবু খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। আপনি লেবু খাবেন তবে পরিমাণ মতো খাবেন এর বেশি খাবেন না।
আপনি হয়তো বলতে পারেন অনেক দিন থেকেই তো খেয়ে আসছি কই কিছুই তো হয়নি, এইরকমটা ভেবে থাকলে মতামত পরিবর্তন করুন। এখন হচ্ছেনা কিন্তু কোন এক সময় এমন ভাবে আপনাকে আকড়ে ধরবে যে আর ছাড়বেই না। এখন আপনার মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি আছে যার কারণে হয়তো কিছুই বুঝতে পারছেন না কিন্তু এমন একটা সময় আসবে যে আপনার শরীর আর আগের মতো কোন কিছুর চাপ নিতে পারছেনা এইসময় যদি আপনাকে চেপে ধরে তাহলে কি করবেন একটাবার ভেবে দেখেছেন কি?
আরও পড়ুনঃ অ্যালোভেরা গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা
ABM Creative IT'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url