অতি গরমে পানি পান করার উপকারিতা

অতি গরমে বেশি বেশি পানি পান করার উপকারিতা নিয়ে আমাদের আজকের এই পোস্ট। আশা করি টাইটেল দেখেই সেইটা বুঝে গেছেন। আসলে বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন। এই পানি ছাড়া আমরা বেঁচে থাকার জন্য কল্পনাতেও আশা করতে পারিনা।

অতি-গরমে-বেশি-বেশি-পানি-পান-করার-উপকারিতা

এই পানি আমাদের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখতে সরাসরি ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রচন্ড গরমে এই পানির প্রয়োজনীয়তা আমরা সবচাইতে বেশি ভালো বুঝতে পারি। চলুন তাহলে এই প্রচন্ড গরমে বেশি বেশি পানি পান করার উপকারিতা সম্পর্কে আজকে আলোচনা করা যাক। 

সূচিপত্রঃ  অতি গরমে বেশি বেশি পানি পান করার উপকারিতা

 অতি গরমে বেশি বেশি পানি পান করার উপকারিতা

আমরা সকলেই জানি, পানির অপর নাম জীবন। পানি আছে আমাদের এক মুহুর্তও চলা যায় না। পানি পান করলে আমাদের শরীর স্বস্তিতে থাকে। শরীর সুস্থ ও আদ্রতা বজায় থাকে। পানি আমাদের শরীরের সুস্থতা বজায় রাখার পাশাপাশি অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, ওজন কমায়, কিডনি ও লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। পানি আমাদের শরীরের আরও অনেক অনেক সমস্যা দূর করে। তাই প্রতিদিন বেশি বেশি পানি পান করা উচিত। বিশেষ করে গরমের সময় বেশি বেশি পানি পান করা উচিত।

অতি-গরমে-বেশি-বেশি-পানি-পান-করার-উপকারিতা

গরমে বেশি বেশি পানি পান করার উপকারিতা: গরমে বেশি বেশি পানি পান করা উচিত। কারণ অতিরিক্ত গরমে আমাদের শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি ঘাম আকারে বেড়িয়ে যায়। ফলে আমাদের শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। এতে থেকে বিভিন্ন সমস্যা হয়। তাই গরমে বেশি বেশি পানি পান করা প্রয়োজন। এছাড়াও পানি আমাদের আরও অনেক উপকার করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পানির ভূমিকা

বেশি বেশি পানি পান করলে আমাদের প্রসাবের চাপ বেড়ে যায়। আর আমাদের শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় অনেক বর্জ্য ও জীবাণু প্রসাবের সাথে বের হয়। তাই আমাদের বেশি সময় ধরে প্রসাবের চাপ নিয়ে থাকা উচিত নয়। এতে আমাদের কিডনি বিকল হয়ে যায়। এছাড়াও আমাদের শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে অনেক জীবাণু বের হয়ে থাকে। 

আরও পড়ুনঃ গরমে তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা

তাই বেশি বেশি পানি পান করলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের জীবাণু প্রসাব বা ঘামের মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে বের হয়ে যায়।গরমে বেশি বেশি পানি পান করলে আমাদের শরীর অনেক সুস্থ থাকে। গরমে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হয় । আর ঘামের মাধ্যমে আমাদের শরীরের অনেক পানি বের হয়ে যায়। ফলে শরীরে পানির ঘাটতি হয়। আর এই ঘাটতি পূরণ করতে আমাদের নিয়মিত পানি পান করা উচিত।

শরীরের আদ্রর্তা বজায় রাখতে পানির অবদান

পানি আমাদের শরীরের সুস্থতা বজায় রাখে পাশাপাশি আমাদের শরীর আদ্র ও ঠান্ডা রাখে। অতিরিক্ত গরমে শরীর যখন অস্থির হয়ে যায়, এক গ্লাস পানি তখন আমাদের শরীর ও মন শীতল করে। অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। প্রতিদিন ৬-৮ গ্লাস বা প্রায় দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করলে আমাদের শরীর আদ্র ও ঠান্ডা থাকে এবং শরীরের তাপমাত্রাও স্বাভাবিক থাকে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে পানির গুরুত্ব

বেশি বেশি পানি পান করলে ত্বকের জন্য ক্ষতিকর কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ফলে আমাদের ত্বক সতেজ থাকে এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়। ত্বকের লাবণ্য বৃদ্ধি পায় যার ফলে চেহারাতে আরো সুন্দর ও মসৃণ ভাব আসে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে পানির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে, যা ত্বককে সতেজ ও উজ্জ্বল রাখে। নিচে পানির কিছু মূল উপকারিতা দেওয়া হলো-
  • ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা
  • টক্সিন দূর করা
  • বলিরেখা ও বয়সের ছাপ কমানো
  • স্বাভাবিক pH ব্যালান্স রক্ষা করা
  • রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করা
  • ফুসকুড়ি ও ইনফেকশন প্রতিরোধ করা
অতি-গরমে-বেশি-বেশি-পানি-পান-করার-উপকারিতা

পর্যাপ্ত পানি পান করলে ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক থাকে এবং বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়। এতে করে ত্বকের স্থায়ী সৌন্দর্য বজায় থাকে। 

পানি পান করার কিছু সহজ উপায়

অতি গরমে বেশি বেশি পানি পান করার উপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। গরম আবহাওয়া বা শরীরচর্চার পরিমাণ বেশি হলে আরও বেশি পানি পান করা প্রয়োজন। চলুন তাহলে কিছু সহজ পানি পান করার উপায় সম্পর্কে জেনে আসি-
  • সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানি পান করুন
  • দিনে দিনে একটু একটু করে পানি পান করুন, একসাথে বেশি নয়
  • তাজা ফল ও শাকসবজির মাধ্যমে পানির চাহিদা পূরণ করুন
  • স্মার্টফোনে পানির রিমাইন্ডার সেট করুন
যথেষ্ট পানি পান করলে আপনার ত্বক প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর থাকবে! তাই নিয়ম করে পরিমাণ মতো পানি পান করুন। 

পানি পানের ফলে আমাদের শরীরের দ্রুত ওজন কমায়

পানিতে কোনো ক্যালরি নেই। বেশি বেশি পানি পান করলে সেটা আমাদের আহার করা খাবার দ্রুত বিপাকে সাহায্য করে। ফলে আমাদের শরীরের ওজন দ্রুত কমিয়ে থাকে। এইটা একেবারে সত্যি যে পানি পান ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদিও পানি সরাসরি ফ্যাট বার্ন করে না, তবে এটি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে। নিচে এই সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করা হলো-

১. বিপাক হার বৃদ্ধি করেঃ
পানি শরীরের বিপাক হার ২৪-৩০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে এবং এটি প্রায় ১-১.৫ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। উচ্চ বিপাক হার মানে শরীর দ্রুত ক্যালোরি পোড়ায়, যা ওজন কমানোর জন্য উপকারী।

২. ক্ষুধা কমায় ও অতিরিক্ত খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করেঃ
অনেক সময় আমরা ক্ষুধা ও তৃষ্ণার পার্থক্য বুঝতে পারি না। খাবারের বদলে এক গ্লাস পানি পান করলে ক্ষুধার অনুভূতি কমতে পারে, ফলে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ এড়ানো সম্ভব হয়।

৩. ক্যালোরি মুক্ত পানীয় হিসেবে কাজ করেঃ
সফট ড্রিংকস বা সুগারযুক্ত পানীয়র পরিবর্তে পানি পান করলে বাড়তি ক্যালোরি গ্রহণের ঝুঁকি কমে।

৪. পরিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করেঃ
যথেষ্ট পানি পান করলে খাবার ভালোভাবে হজম হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়, যা ওজন কমানোর জন্য সহায়ক।

৫. ব্যায়ামের কার্যকারিতা বাড়ায়ঃ
শরীরচর্চার সময় পর্যাপ্ত পানি পান করলে এনার্জি লেভেল বাড়ে এবং ক্যালোরি বার্ন করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

৬. টক্সিন বের করে দেয়ঃ

পানি শরীর থেকে টক্সিন ও বর্জ্য পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে, যা ফোলাভাব কমায় ও শরীরকে হালকা অনুভব করায়।

ওজন কমানোর জন্য পানি পানের সঠিক নিয়ম

  • খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানি পান করুন, এতে কম খাবার খাওয়া হয়
  • গরম পানি বা লেবু-পানি পান করলে ফ্যাট বার্নের হার বাড়তে পারে
  • বেশি পানি খাওয়ার জন্য বোতল সঙ্গে রাখুন এবং দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন
  • খালি পেটে সকালে গরম পানি পান করুন, এটি বিপাক হার বাড়ায়

আরও পড়ুনঃ লেবুর খোসা খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা

পানি পানের অভ্যাস তৈরি করলে ওজন কমানো সহজ হবে এবং শরীর সুস্থ থাকবে!

পানি আমাদের কিডনি ও লিভারের সমস্যা দূর করে যে ভাবে

গরমে পানি পান করা কম হলে আমাদের কিডনি ও লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় । যার কারণে আমাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়, প্রস্রাব গাঢ় হলুদ রঙের হয়। এছাড়াও মাঝে মাঝে প্রস্রাবে ইনফেকশনও দেখা দেয়। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরি

অতি-গরমে-বেশি-বেশি-পানি-পান-করার-উপকারিতা

এছাড়াও প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়। পানি পান‌ করা হলে আমাদের শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে পড়ে। ফলে আমাদের শরীরের সকল বিপাকিয় কাজ যার জন্য পানির প্রয়োজন তা ব্যাহত হয় । শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলে আমাদের চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। কোনো ব্যক্তি পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না বা পারবে না। একজন ব্যক্তি পানি ছাড়া ৩ দিন বাঁচতে পারে। এরপর আর কারো সম্ভব নয়।

অপকারিতা সমূহ

পানি কম পান করার অপকারিতা 

পানি কম পান করলে আমাদের শরীরের অনেক সমস্যা দেখা দেয়। এই ভুল কখনোই করবেন না। আসুন কম পানি পান করলে কি কি সমস্যা হতে পারে জেনে আসি। 

১. শরীরে পানির ঘাটতি হলে আমাদের শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে পড়ে।

২. পানি কম পান করলে আমাদের শরীরে জড়তা অনুভব হয়। এবং চোখের সকল কোষগুলো শুকিয়ে যায় ফলে আমাদের চোখের সমস্যা দেখা দেয়।

৩. পানি কম পান করলে আমাদের কিডনি ও লিভারের সমস্যা দেখা দেয়। বেশি দিন হয়ে গেলে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে।

৪. ত্বকের অভ্যন্তরীণ কোষগুলো শুকিয়ে যায় ফলে আমাদের ত্বকের চামড়া তাড়াতাড়ি কুঁচকে যায় ও সজীবতা হারায়।

৫. বিভিন্ন ধরনের রোগ বেড়ে যায়। প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দেয়।

তাই আমাদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত। 

অতিরিক্ত পানি পান করার অপকারিতা

পানি কম পান করলে যেমন বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দেয়, তেমনই পানি অতিরিক্ত পান করলেও শরীরে বিভিন্ন প্রকার সমস্যা দেখা দেয়। তাই প্রয়োজনের কম এবং বেশি পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন। সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে পানি পান করুন। চলুন জেনে আসি অতিরিক্ত পানি পান করলে কি কি সমস্যা হতে পারে। 

১. অতিরিক্ত পানি পান করলে শরীরে ক্লান্তি অনুভব হয়। এছাড়াও মাথাব্যথার মতো সমস্যা দেখা দেয়।

২. অতিরিক্ত পানি পান করলে আমাদের শরীর থেকে পানি অপসারনের পরও শরীরে অতিরিক্ত পানি থেকে যায়। ফলে আমাদের শরীরের ওজন কমার পরিবর্তে ওজন বেড়ে যায়।

৩. অতিরিক্ত পানি পান করলে আমাদের শরীরের ইলেকট্রোলাইটগুলো পাতলা হয়ে যায়। ফলে আমাদের শরীরে সোডিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। শরীরে সোডিয়ামের ঘাটতি হলে আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এছাড়াও খিঁচুনি ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।

৪. অতিরিক্ত পানি পান করলে হাইপোন্যট্রিমিয়া হতে পারে। যা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

শেষ কথা

আমাদের শরীরের কথা বিবেচনা করে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তাহলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে আর আমাদের শরীরের কোনো ক্ষতিও হবে না। প্রতিদিন প্রত্যেকটি মানুষের ৮-১০ গ্লাস বা প্রায় দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করতে হবে । তাহলে আমাদের শরীর ঠিক থাকবে। অতিরিক্ত পানি পান করা থেকে বিরত থাকব। নাহলে আমাদের শরীর নিয়ে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। আবার পানি কম পান করাও যাবে না। এতে আমাদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিবে। তাই সকল দিকে বিশেষ লক্ষ্য রেখে আমাদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তাহলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে।

আরও পড়ুনঃ পাকা বেল খাওয়ার উপকারিতা

এতোক্ষণ সময় দিয়ে  পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। এই রকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের এই সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন এবং আমাদের পাশেই থাকুন। আপনি কি ধরনের পোস্ট পড়তে আগ্রহী সেইটা কমেন্ট করে জানাবেন আপনাদের চাহিদার প্রাধান্য দিয়ে আমাদের পোস্টগুলো প্রস্তুত করবো ইনশাআল্লাহ। আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি, এই লিখনির মাঝে কোন প্রকার ভুল থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি, আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ABM Creative IT'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url