ভিপিএন ব্যবহারের সুফল ও কুফল

ভিপিএন ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো সম্পর্কে আজকে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি। আপনারা অনেকেই বিভিন্ন কাজে ভিপিএন ব্যবহার করে থাকেন। অনেকেই বিভিন্ন রকম আশঙ্কায় থাকেন এই ভিপিএন আপনার জন্য কতটুকু নিরাপদ সেই বিষয়টি নিয়ে। 

ভিপিএন-ব্যবহারের-সুফল-ও-কুফল

আর সেই জায়গা থেকেই আজকে এই ভিপিএন সম্পর্কে এ টু জেড আপনাদেরকে জানানোর জন্য চলে আসলাম আশা করি এই পোস্টের শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকবেন। আর এতে করে আপনাদের সমস্যা আজকে থেকে সমাধান হতে চলেছে। 

সূচিপত্রঃ ভিপিএন ব্যবহারের সুফল ও কুফল

ভিপিএন ব্যবহারের সুফল ও কুফল

বর্তমানে ভিপিএন একটি দ্রুত সমাধানের নাম বা মাধ্যম। আমাদের কোন সাইট থেকে যদি ব্লক করে দেওয়া হয় বা বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে সেই সাইটে প্রবেশের জন্য এই ভিপিএন এর ব্যবহার করে থাকি বেশি। এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্র বিশেষে এই ভিপিএন ব্যবহার করে থাকি। তাহলে বুঝতেই পারছেন এই ভিপিএন আমাদের কত কাজের একটা বিষয়। তবে িএই ভিপিএন যেমনটাই উপকারি তেমনটাই আবার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। 

নিউটনের তৃতীয় সূত্র নিশ্চয় আমরা জানি যে প্রতিটি ক্রিয়ারেই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ঠিক তেমনি ভিপিএন ব্যবহার করলেও তেমনি কিছু ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর কারণ আছে। চলুন নিম্নে েএইসব কারণ বিস্তারিত ভাবে আলোচনার মাধ্যমে আপনাদের অবগত করি। বাকি সিদ্ধান্ত আপনারাই নিবেন ভিপিএন কিভাবে ব্যবহার করবেন এবং আদো ব্যবহার করবেন কিনা!

ভিপিএন কী

VPN (Virtual Private Network) হলো একটি প্রযুক্তি যা ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট সংযোগকে নিরাপদ এবং ব্যক্তিগত রাখে। এটি ব্যবহারকারীর ডেটা এনক্রিপ্ট করে এবং একটি দূরবর্তী সার্ভারের মাধ্যমে ইন্টারনেট ট্রাফিক রুট করে, যাতে তাদের অনলাইন কার্যক্রম ট্র্যাক করা না যায় বা হ্যাকারদের দ্বারা হ্যাক না হয়। ভিপিএন এমন একটি প্রযুক্তি যা ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট সংযোগকে নিরাপদ ও ব্যক্তিগত রাখে। 

ভিপিএন আবিষ্কার করেন কে এবং কখন

ভিপিএন এর ধারণা প্রথম ১৯৯৬ সালে মাইক্রোসফট কোম্পানির একদল প্রকৌশলী তৈরি করেন। তারা মূলত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য PPTP (Point-to-Point Tunneling Protocol) নামের একটি প্রযুক্তি তৈরি করেন, যা পরবর্তীতে ভিপিএন -এর ভিত্তি হয়ে ওঠে।

ভিপিএন কিভাবে আবিষ্কার হলো

১৯৯০-এর দশকে, ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়তে থাকলে নিরাপদ ডেটা আদান-প্রদানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, বিশেষ করে ব্যবসা ও সংস্থাগুলোর জন্য। মাইক্রোসফট-এর প্রকৌশলীরা ১৯৯৬ সালে PPTP (Point-to-Point Tunneling Protocol) তৈরি করেন, যা ব্যবহারকারীদের একটি নিরাপদ টানেল (Encrypted Connection) দিয়ে ইন্টারনেটে যুক্ত হতে দেয়। পিপিটিপি ছিল ভিপিএন -এর প্রথম সংস্করণ, যা মূলত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের দূরবর্তীভাবে অফিস নেটওয়ার্কে নিরাপদে সংযোগের সুযোগ দিত।

ভিপিএন এর বিবর্তন

১৯৯৬ সালে মাইক্রোসফট কোম্পানি পিপিটিপি প্রোটোকল তৈরি করেন। 

আরও পড়ুনঃ ইউটিউব থেকে ভিডিও ডাউনলোড করুন ১ ক্লিকেই

২০০০-এর দশকঃ ওপেন ভিপিএন এবং IPSec-এর মতো উন্নত ভিপিএন প্রযুক্তি আসে, যা সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য সহজলভ্য হয়।

বর্তমানঃ এখন ভিপিএন সেবা বিভিন্ন কোম্পানি প্রদান করে এবং এটি শুধুমাত্র ব্যবসার জন্য নয়, বরং সাধারণ ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার জন্যও ব্যবহৃত হয়।

ভিপিএন-কেনো-ব্যবহার-করবেন-ভিপিএন-এর-ব্যবহার

ভিপিএন আবিষ্কারের প্রধান উদ্দেশ্যগুলো কি কি ছিল

  • নিরাপদ ইন্টারনেট সংযোগ তৈরি করা
  • ব্যবসায়িক ডেটা সুরক্ষিত রাখা
  • দূরবর্তী কর্মীদের নিরাপদে অফিস নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করা
  • অনলাইন গোপনীয়তা নিশ্চিত করা

বর্তমানে ভিপিএন প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে এবং এটি সাইবার নিরাপত্তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ভিপিএন কীভাবে কাজ করে

তথ্য এনক্রিপশন

আপনি যখন ভিপিএন ব্যবহার করেন, তখন এটি আপনার ডিভাইস থেকে প্রেরিত সমস্ত ডেটা এনক্রিপ্ট করে। ফলে, আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি), হ্যাকার বা সরকার আপনার ব্রাউজিং ডেটা দেখতে পারে না।

সুরক্ষিত টানেল তৈরি

ভিপিএন একটি সুরক্ষিত "টানেল" তৈরি করে, যার মাধ্যমে আপনার ডেটা গোপনে সার্ভারে পৌঁছে যায়। এটি আপনাকে পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময়ও নিরাপদ রাখে।

আইপি ঠিকানা পরিবর্তন

ভিপিএন সার্ভার ব্যবহারকারীর আসল আইপি ঠিকানাকে পরিবর্তন করে দেয় এবং এটি ভিপিএন সার্ভারের আইপি ঠিকানা ব্যবহার করে। ফলে, কেউ আপনার প্রকৃত অবস্থান বা পরিচয় শনাক্ত করতে পারে না।

ভিন্ন লোকেশনের সার্ভার ব্যবহার

ভিপিএন সার্ভার সাধারণত বিভিন্ন দেশে থাকে। আপনি যখন একটি নির্দিষ্ট দেশের ভিপিএন সার্ভারে সংযুক্ত হন, তখন আপনার লোকেশন সেই দেশের মতো দেখায়। ফলে, আপনি সেই দেশের জন্য নির্দিষ্ট ব্লক করা ওয়েবসাইট বা কনটেন্ট অ্যাক্সেস করতে পারেন।

ভিপিএন  ব্যবহারের সুবিধা-

  • নিরাপত্তা: হ্যাকারদের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়।
  • গোপনীয়তা: আপনার অনলাইন কার্যক্রম গোপন রাখে।
  • সেন্সরশিপ এড়ানো: ব্লক করা ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করা যায়।
  • লোকেশন পরিবর্তন: ভিন্ন দেশের সার্ভারে সংযোগ দিয়ে ভিন্ন অবস্থান দেখানো যায়।

ভিপিএন ব্যবহারের কিছু সাধারণ ক্ষেত্র-

  • পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময়
  • অফিসিয়াল বা ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ রাখা
  • ব্লক করা সাইট অ্যাক্সেস করা
  • বিভিন্ন দেশের স্ট্রিমিং কনটেন্ট দেখা (যেমন- নেটফ্লিক্স, হুলু)

ভিপিএন এর কিছু জনপ্রিয় ব্যবহার

  • সুরক্ষিত ব্রাউজিং: পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময় ডেটা সুরক্ষা।
  • সেন্সরশিপ এড়ানো: ব্লক করা ওয়েবসাইট ও পরিষেবা ব্যবহার করা।
  • লোকেশন পরিবর্তন: নির্দিষ্ট দেশের কনটেন্ট বা সার্ভিস ব্যবহার করা।
  • ব্যবসায়িক নিরাপত্তা: অফিসের কর্মীরা দূর থেকে নিরাপদভাবে কাজ করতে পারে।

ভিপিএন এর কিছু জনপ্রিয় পরিষেবা

  • Nord ভিপিএন 
  • Express ভিপিএন 
  • Cyber Ghost
  • Proton ভিপিএন 
  • Surfshark

ভিপিএন ব্যবহারের কুফল বা খারাপ দিক

ভিপিএন অনেক সুবিধা দিলেও, এর কিছু সীমাবদ্ধতা বা খারাপ দিকও রয়েছে। নিচে ভিপিএন ব্যবহারের কিছু কুফল তুলে ধরা হলো-

১. ধীরগতির ইন্টারনেট সংযোগ

  • ভিপিএন আপনার ডেটা এনক্রিপ্ট করে এবং দূরবর্তী সার্ভারের মাধ্যমে ট্রাফিক রুট করে, ফলে ইন্টারনেট স্পিড কমে যেতে পারে।
  • বিশেষ করে যদি ভিপিএন সার্ভার খুব দূরে থাকে বা সার্ভারে অনেক ব্যবহারকারী সংযুক্ত থাকে।

২. বিনামূল্যের ভিপিএন নিরাপদ নয়

  • অনেক ফ্রি ভিপিএন ব্যবহারকারীর ডেটা সংরক্ষণ করে এবং তৃতীয় পক্ষকে বিক্রি করতে পারে।
  • কিছু ফ্রি ভিপিএন আপনার ব্রাউজিং তথ্য ট্র্যাক করে এবং বিজ্ঞাপন দেখায়।
  • সস্তা বা অবিশ্বস্ত ভিপিএন পরিষেবাগুলোর মধ্যে ম্যালওয়্যার ও ডাটা লিক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

৩. কিছু ওয়েবসাইট ও পরিষেবা ভিপিএন ব্লক করে

  • অনেক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম (যেমন- নেটফ্লিক্স, হুলু, ডিসনি+) ভিপিএন ব্যবহারকারীদের ব্লক করে।
  • কিছু ব্যাংকিং ওয়েবসাইট ভিপিএন ব্যবহারের কারণে লগইন করতে দেয় না, কারণ এটি সন্দেহজনক কার্যকলাপ মনে করতে পারে।

৪. ভিপিএন সবসময় ১০০% নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না

  • যদিও ভিপিএন এনক্রিপশন ব্যবহার করে, তবুও এটি ম্যালওয়্যার, ফিশিং অ্যাটাক, বা কুকি ট্র্যাকিং থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দেয় না।
  • যদি ভিপিএন সার্ভার কম মানের হয় বা কোম্পানি ব্যবহারকারীর তথ্য সংরক্ষণ করে, তাহলে গোপনীয়তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

৫. ভিপিএন ব্যবহার আইনগত সমস্যার কারণ হতে পারে

  • কিছু দেশে (যেমন- চীন, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত) ভিপিএন ব্যবহার অবৈধ বা সীমিত।
  • ভুল ভিপিএন সার্ভার ব্যবহার করলে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে।

৬. ভালো মানের ভিপিএন ব্যয়বহুল হতে পারে

  • নিরাপদ এবং দ্রুত ভিপিএন পেতে হলে পেইড পরিষেবা ব্যবহার করতে হয়, যা মাসিক বা বার্ষিক ফি নেওয়া হয়।
  • ফ্রি ভিপিএন-এ সাধারণত স্পিড কম থাকে এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি বেশি থাকে।
ভিপিএন-ব্যবহারের-সুবিধা-ও-অসুবিধা

সংক্ষেপে ভিপিএন -এর খারাপ দিক সমূহ

  • ইন্টারনেট ধীর হতে পারে।
  • ফ্রি ভিপিএন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
  • কিছু ওয়েবসাইট ও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ভিপিএন ব্লক করে।
  • ভিপিএন সবসময় হ্যাকিং বা ম্যালওয়্যার থেকে রক্ষা করে না।
  • কিছু দেশে ভিপিএন অবৈধ হতে পারে।
  • ভালো মানের ভিপিএন পেতে খরচ বেশি হয়।

মন্তব্য

ভিপিএন ব্যবহারের সুফল ও কুফল সম্পর্কে আমরা এই পোস্টের মধ্যে সব কিছু বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই ভিপিএন সম্পর্কে এখন ভালো-মন্দ আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। আপনাকে আর আলাদা ভাবে আর বোঝানো লাগবে না। এখন সিদ্ধান্ত আপনার আপনি ভিপিএন ব্যবহার করবেন নাকি করবেন না! আর যদি ব্যবহার করেন তাহলে সেইটা কি ফ্রিতে ব্যবহার করবেন নাকি কিনে ব্যবহার করবেন সেইটা আপনার সিদ্ধান্ত। 

আরও পড়ুনঃ ইউটিউব থেকে ভিডিও ডাউনলোড করার সহজ ২টি উপায়

তবে আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য পরামর্শ  থাকবে আপনি যদি ভিপিএন ব্যবহার করতে চান, তাহলে বিশ্বস্ত এবং ভালো মানের ভিপিএন বেছে নেওয়া উচিত (যেমন- Nord ভিপিএন, Express ভিপিএন, Surfshark, Proton ভিপিএন ইত্যাদি)। এইসব ভিপিএন অনেক ভালো মানের এবং সুবিধাও অনেক। আর হ্যাঁ এই পোস্টে বিস্তারিত সকল বিষয় মোবাইল, ডেক্সটপ, ল্যাপটপ সবার জন্যই প্রযোজ্য।

আশা করি আজকের এই পোস্ট আপনার বাস্তব জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরি ভূমিকা রাখবে। এতোক্ষণ আমাদের এই পোস্ট ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে আপনার যে কোন পরামর্শ থাকলে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। পোস্টের লিখনিতে কোন প্রকার ভুল থাকলে তা ক্ষমা করে দিবেন এবং ভুলগুলো সুধরিয়ে নেওয়ার সুযোহ করে দিবেন। আর তার জন্য অবশ্যই অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। আমার সকল পাঠকের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি। সকলেই ভালো থাকবেন এবং সুস্থ্য ও সুন্দর থাকবেন। আল্লাহাফেজ, আসসালামু আলাইকুম। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ABM Creative IT'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url