গরমে তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা - তরমুজ চাষ সম্পর্কে ধারণা

গরমে তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের পোস্ট। হয়তো টাইটেল দেখেই সেইটা আপনারা বুঝে গেছেন। আসলে তরমুজ একটি রসালো ফল এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে।
গরমে-তরমুজ-খাওয়ার-উপকারিতা

গরমের সময় তরমুজ খেলে শরীর থেকে অনেক রকম সমস্যার উপশম হয়ে থাকে। চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে আসি এই তরমুজ খাওয়ার উপকারিতাগুলো কি?  এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।  

সূচিপত্রঃ গরমে তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা

গরমে তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা 

তরমুজ একটি গ্ৰীষ্মকালীন ফল। গ্ৰীষ্মকালীন সকল ফলের মধ্যে তরমুজ অন্যতম। এটি একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। তরমুজ পছন্দ করেন না বা খান না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। গ্ৰীষ্মকালীন এই ফলের অনেক অনেক উপকারীতা রয়েছে । তরমুজ আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি ফল। তরমুজে রয়েছে ভিটামিন এ, বি-২, সি, পটাশিয়াম। 

যা আমাদের চোখ, দাঁত, চুল, নখ এবং শরীরের অনেক সাহায্য করে। এছাড়াও আমাদের শরীরের সকল ক্লান্তি দূর তরতেও বিশেষ ভাবে ভূমিকা রেখে থাকে। এই তরমুজের জুস বা সরাসরি খোসা থেকে খাওয়া দুইটাই বেশ মজাদার ব্যাপার। আর এই ফলের পুষ্টিগুণের কথা বলতে গেলে তো এর কোন তুলনাই নেই এই গরমে। চলুন তাহলে এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানা যাক এইবার। 

তরমুজের পুষ্টি উপাদান ও গুণাগুণ 

গ্ৰীষ্ম ঋতুতে তরমুজ ম্যাজিক এর মত তার গুণাগুণ প্রকাশ করে। এই সময় নিয়মিত তরমুজ খেলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে। গ্ৰীষ্মকালে প্রায় আমাদের শরীরে পানি শূন্যতা দেখা যায়। তরমুজে প্রায় ৯২ ভাগ পানি আছে, যা আমাদের শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ কর। এছাড়া এতে বিদ্যমান ভিটামিন এ আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়। এতে ভিটামিন সি আছে, যা আমাদের দাঁতের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে।

আরও পড়ুনঃ লেবুর খোসা খেলে কি হয়

এছাড়াও গরমে তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা বা পুষ্টি গুণাগুণ আরও আছে। নিচে এইগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

১. তরমুজ আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এটি আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও কিডনির বিভিন্ন সমস্যা দূর করে কিডনিকে সচল রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

২. তরমুজ আমাদের শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করে শরীরকে সতেজ করে।

৩. তরমুজ আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। ত্বকের ভেতরের বিভিন্ন কোষ ও টিস্যুগুলোকে সতেজ রাখে।

৪. তরমুজে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম থাকায় আমাদের শরীরের ওজন কমাতে বা ঠিক রাখতে সাহায্য করে থাকে। 

৫. নিয়মিত তরমুজ খেলে রক্ত শূন্যতা কমে আসে। তরমুজ আমাদের শারীরিক দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে।

৬. হার্টের রক্ত সঞ্চালন করতে সহায়তা করে। তরমুজ নিয়মিত খেলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কম থাকে।

৭. তরমুজে পানির পরিমাণ অনেক থাকায় আমাদের শরীরের পানির ঘাটতিও দূর করে থাকে। 
গরমে-তরমুজ-খাওয়ার-উপকারিতা

তরমুজের বীজ খাওয়ার উপকারিতা

গরমে তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা অনেক। শুধু এই তরমুজ থেকেই নয় বরং তরমুজের পাশাপাশি এর বীজও আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। কি? অবাক হচ্ছেন! অবাক হওয়ারি কথা, এই রকম কথা হয়তো আগে কারো কাছে না শুনে থাকতে পারেন। অবাক হলেও কথা সত্যি। তরমুজের বিজি আমরা তরমুজ খাওয়ার সময় অনেকেই এর বিচি ফেলার অলসতা থেকে খেয়ে ফেলি। যারা এই কাজটি করে থাকেন আমি বলবো তারা অলসতা করলেও নিজের শরীরের জন্য ভালো কাজটাই করেন যেইটা তারা অজান্তেই করে থকেন। তরমুজের বীজ আমাদের শরীরের জন্য কি উপকার করে থাকে সেইটা জেনে আসি চলুন- 

১. তরমুজে বীজ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

২.এর বীজ হার্টের সুস্থতা বজায় রাখে।

৩. হজমে সাহায্য করে।

৪. এই বীজ আমাদের নখ, চুল, চোখ, দাঁত এর জন্যেও অনেক উপকারী।

তরমুজ খাওয়ার অপকারিতা

যেকোনো খাবারের যেমন কিছু ভালো দিক থাকে তেমনি কিছু খারাপ দিকও থাকে। তরমুজ ও এর বাইরে নয়। প্রচুর গুণসমৃদ্ধ তরমুজ খাওয়ার যেমন অনেক উপকার আছে তেমনি কিছু অপকারিতা ও আছে। ভাবছেন যে এইটা একটি ভালো ফল এইটা খেলে আবার কি ক্ষতি বা অপকার হতে পারে! তাহলে তো কারণগুলো জানতেই হয় চলুন তাহলে জেনে আসি গরমে তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা হওয়ার পরিবর্তে অপকার কেনো হবে-

১. অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খেলে পেট ফাঁপা, গ্যাস্ট্রিক বা হজমে সমস্যা হতে পারে।

২. ডায়াবেটিকস রোগীরা অতিরিক্ত তরমুজ খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। 

৩. তরমুজে প্রায় ৯২ ভাগ পানি আছে। অতিরিক্ত তরমুজ খেলে শরীরে পানির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। ফলে শরীরে সোডিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়।

৪. তরমুজ খেলে যেমন কিডনি লিভারের সমস্যা দূর হয় ঠিক তেমনি অতিরিক্ত তরমুজ খেলে কিডনি ও লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

আশা করি অপকারিতা সম্পর্কে জেনে গেছেন। তাহলে এখন থেকে আমাদের শুধু খাওয়ার কথা চিন্তা-ভাবনা করলে হবে না সাথে এর সাইড ইফেক্টও জানতে হবে। সেই সাথে কখন কি ভাবে খাবেন সেই সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে নিতে হবে। নিচে সেই সম্পর্কে দেওয়া হলো। 

তরমুজ খাওয়ার সময় ও পরিমাণ

তরমুজ সবসময় দিনের বেলায় খাওয়া উচিত। বিশেষ করে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার খাওয়ার আগে এই মাঝের সময়টায় বেশি ভালো। বিকাল বা সন্ধ্যার পর তরমুজ খেলে হজমে সমস্যা বেশি হয় এবং সারারাত পেট ফাঁপা থাকে। এছাড়াও তরমুজে ৯২ ভাগ পানি থাকায় সন্ধ্যার পর খেলে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে। রাতে তরমুজ খেলে অতিরিক্ত পানি থাকায় প্রসাবের চাপ বেড়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ চিকেন বারবিকিউ তৈরির সহজ রেসিপি

বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ও ডাক্তারের মতে একজন মানুষের দৈনিক ৩০০-৫০০ গ্ৰাম তরমুজ খাওয়া উচিত। এর বেশি খেলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে গরমের সময় হয়তো এই সমস্যাগুলো খুবই কম হয়ে থাকে। যেহেতু শরীরে সার্বক্ষণিক পানির প্রয়োজন পড়ে। এছাড়াও অনেকের শরীরের উপর ভিত্তি করে বা হজমের উপর ভিত্তি করে সে চাইলে বেশিও খাইতে পারে। কিন্তু তারপরেও প্রত্যেকটা বিষয়েই সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। 

তরমুজের ব্যবসা করার ধারণা

গ্ৰীষ্মকালে তরমুজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তরমুজ একটি লাভজনক ফল। গ্ৰীষ্মে তরমুজ খায় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। তাই যে কেউ চাইলেই এই তরমুজের চাষ করে লাভবান হতে পারে অথবা পাইকারি তরমুজ জমি থেকে কিনে বাজারে বাজারজাতকণ করেও বেশ লাভবান হতে পারে। আর এই বড় আকুতির ফল তরমুজ চাষাবাদেও অনেক সুবিধা রয়েছে। এই ফল উৎপাদন করার সময় পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয় বলে চাষ করাও সাশ্রয়ী হয় কৃষকের জন্য। 
তরমুজ-চাষের-জায়গা-নির্বাচন-ও-উৎপাদন-এবং-ফল-সংগ্রহ-প্রক্রিয়া

তরমুজ চাষের জায়গা নির্বাচন ও উৎপাদন এবং ফল সংগ্রহ প্রক্রিয়া 

যে কেউ যে কোনো পতিত জমিতে বা বাসা-বাড়িতে খুব সহজেই এই তরমুজ ফল চাষ করতে পারেন। এখন বাসা-বাড়ির ছাদ বাগানে বিভিন্ন ফল চাষ করে থাকেন অনেকেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর দেখা মিলবে শহরের বড় বড় বাসা-বাড়ির বিল্ডিং এর ছাদে। এছাড়াও পানি জমে না এমন উঁচু জমিতে তরমুজ চাষ করা যেতে পারে।

তরমুজ চাষের সঠিক সময় 

সাধারণত তরমুজের বীজ থেকেই চারা তৈরি করা হয়। জানুয়ারি মাসের শেষ বা ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে তরমুজের বীজ বপন করতে হয়। এবং শীতের কবল থেকে রক্ষা করে রাখতে হয়।

বীজ বপন 

জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে বা ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে তরমুজের বীজ বপন করতে হয় বীজ প্রথমে ছোট পলিব্যাগ বা ছোট কোনো পাত্রে বপন করতে হয় চারা হলে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়। বীজ বপনের জন্য পলিব্যাগ বা ছোট পাত্রে বালির সাথে পঁচা গোবর সার মেশাতে হবে। এরপর এতে ৪-৫ টি বীজ বপন করতে হবে। বীজ থেকে চারা তৈরি হতে ৩০-৪০ দিন সময় লাগে।

চারা রোপণ

চারায় ৪-৫ পাতা হলে এটাকে জমিতে বা টবে রোপণ করতে হয়। চারা রোপণের আগে জমিতে সেচ ও সার দিতে হয় । চারা রোপণের পর এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দিতে হবে। চারা রোপণের ৭-১০ দিন পর এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হয়।

ফল সংগ্রহ 

তরমুজ হতে চারা রোপণের পর থেকে প্রায় ৩-৪ মানুষ সময় লাগে। তরমুজের গাছ শুকিয়ে তরমুজের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। তরমুজের খোসা সবুজ রং থেকে কিছুটা হলুদাভ সবুজ রং ধারণ করে। তখন বুঝা যায় তরমুজ পরিপক্ক হয়েছে।

তরমুজ চাষে সাবধানতা অবলম্বন

বর্তমানে মানুষ বেশি লাভের আশায় সময়ের আগেই তরমুজে বিভিন্ন ফরমালিন ও রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করে। ফলে সময়ের আগেই তরমুজে লাল রং চলে আসে। এসব করা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত। কারণ এসবের কারণে আমাদের শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও অনেক। তাই এসব ব্যবহার না করে সময় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত। 

এসব বন্ধের জন্য ব্যক্তিগত ও সরকারি উভয়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শুধু চাসের ক্ষেত্রে নয় প্রত্যেকের জন্যই খাওয়ার ক্ষেত্রেও এই বিষয়গুলি খেয়াল রাখবেন সকলেই। এতে করে আপনি যেনো সুস্থ্য থাকতে পারে। কারণ কিছু অসাধু ব্যবসায়িরা এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করে তরমুজের ব্যবসা করে থাকেন। তাই আসুন আমরা সকলেই যে যার জায়গা থেকে সাবধানতা অবলম্বন করি এবং সচেতন হই।

মন্তব্য

তরমুজ লাভজনক ও অনেক উপকারী একটি রসালো ফল। তরমুজ আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। উপকারের পাশাপাশি অপকারও করে বেশ। তাই আমাদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে তরমুজ খাওয়া উচিত তবে সেইটা নিজের শরীরের উপর নির্ভরশীলতার উপর ভিত্তি করে। তাই তরমুজ চাষে আমাদের আগ্ৰহী হওয়া দরকার এবং তরমুজ চাষীদের বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগে নিষেধ ও এসব প্রয়োগের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তাদের ধারণা দেওয়া আমাদের কর্তব্য। 

আরও পড়ুনঃ থানকুনি গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

পরিশেষে বলা যায়, আজকের এই পোস্ট থেকে আপনার শিক্ষা গ্রহণ করুন তরমজু শুধু উপকার নয় অপকারও করে থাকে যা আমরা সরাসরি বুঝতে পারিনা। আশা করি আজকের এই পোস্ট আপনার শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে তরমুজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবগত করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের সকল পোস্টের আপডেট পেতে এই সাইডের সাথেই থাকুন এবং সেই সাথে আপনাদের যে কোন প্রকার মন্তব্য থাকলে তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারেন। সবাই সুস্থ্য ও সুন্দর থাকবেন এই আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে আজকের পোস্ট এইখানেই সমাপ্তি ঘোষণা করছি, আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ABM Creative IT'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url