তারাবিহ নামাজ কতো রাকাত পড়বেন ৮ নাকি ২০

 

তারাবিহ নামাজ কতো রাকাত  পড়বেন ৮ নাকি ২০ এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন কেবলমাত্র রমজান মাসেই প্রয়োজন পড়ে। কারণ, রমজান মাসেই এই সালাতুল তারাবিহ’র নামাজ পড়া হয়। আর এই নামাজের ফজিলত ও অনেক। 

তারাবিহ-নামাজ-কতো-রাকাত-পড়বেন-৮-নাকি-২০

অন্যান্য মাসের এবং সময়ের চেয়ে এই রমজান মাসের ইবাদাতের নেকি বা সওয়াব অনেকগুণ বেশি। তাই নফল ইবাদতের এইসব দ্বন্দ/ফেতনা থেকে দূরে সরে আসাই শ্রেয় এবং যে যতটুকু পারি আল্লাহুর ইবাদত করি। চলুন তাহলে এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জেনে আসি।  

সূচিপত্রঃ তারাবিহ নামাজ কতো রাকাত  পড়বেন ৮ নাকি ২০

তারাবিহ নামাজ কতো রাকাত  পড়বেন ৮ নাকি ২০

বর্তমান সময়ের সবচাইতে ধর্মীয় আলোচিত বিষয়, বিশেষ করে মুসলিমদের আলোচিত বিষয় এই তারাবিহ’র নামাজ কত রাকাত? বাংলাদেশে এর প্রবনতা সবচাইতে বেশি। মুসলিমদের মাঝেই এইটা নিয়ে অনেক দ্বন্দ বিভেদ তৈরি হয়েছে বর্তমানে। যার কারণে এই সমস্যা এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। 

আরও পড়ুনঃ সিলেট জেলার সেহেরী ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৫

প্রকৃত পক্ষে তাহলে এই নামাজ কত রাকাত? এই বিষয়ে জানার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আগেই জানিয়ে রাখি। বর্তমান বাংলাদেশে তথা বিশ্বেও বেশ কয়েকটি মাজহাব সৃষ্টি হয়েছে। এইগুলাই মূলত ধর্মীয় ভাবে ভেদাভেদ সৃষ্টি করেছে। আমরা অনেকেই অনেক সময় কিছু কাজের সুবিদার্থে বা ভালো কাজের প্রচারের জন্য কোন সংগঠন তৈরি করে সেইটার একটু সুন্দর নামকরণ করে থাকি। 

আর সেই সুবাদে কিছু সংগঠনের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও আরো কিছু সংগঠন তৈরি হয় ইসলামের কিছু বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিবর্গের অনুসরণে এইসব দল তৈরি বা সংগঠন তৈরি হয়ে থাকে। আর সংগঠনের মধ্যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অনুসারে আহলেহাদীস বা হাদিসের অনুসারি এদের প্রবণতা বা বিচরণ বেশি এবং মাজহাব এর ভেতরে হানাফির বিচরণ বেশি। তবে প্রত্যেকটা মজহাব কোন না কোন ব্যক্তিকে অনুসরণ করে থাকে। 

তবে বর্তমানে আহলেহাদিস অভিমুখি যারা তারা নির্দিষ্ট কোন মাজহাবকে অনুসরণ বা অনুকরণ করেনা। এরা নিজেরা প্রত্যেকটা বিষয় কোরআন এবং নবী ও সাহাবাদের হাদিস থেকে রিসার্চ করে তাদের কাছে যেইটা সহিহ মনে হয় তারা সেটাই পালন করে থাকে এবং সাবাইকে উৎসাহ দিয়ে থাকে।যার কারণে তারা প্রত্যেকেরই অনুসরণ করে নির্দিষ্ট কাউকে একাধারে অন্ধভাবে অনুসরণ করেনা। 

এইবার আসি মাজহাবের বিষয়ে। মাজহাব কত প্রকার? কি কি? কোন মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা কে? সুন্নি কারা? শিয়া কারা? শিয়াদের মাজহাবের নাম কি এবং তার প্রতিষ্ঠা তে? এইসবের বিশ্লেষণ ও উত্তর নিয়ে এইবার আলোচনায় আসি। 

মাজহাব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা

ইসলামে মূলত চারটি প্রধান সুন্নি মাজহাব (মাযহাব) রয়েছে। 

এগুলো হলো;

  • হানাফি মাজহাব – প্রতিষ্ঠাতা: ইমাম আবু হানিফা (রহ.)
  • মালিকি মাজহাব – প্রতিষ্ঠাতা: ইমাম মালিক ইবনে আনাস (রহ.)
  • শাফেয়ি মাজহাব – প্রতিষ্ঠাতা: ইমাম আশ-শাফেয়ি (রহ.)
  • হানবলি মাজহাব – প্রতিষ্ঠাতা: ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)

এগুলো চারটি সুন্নি মাজহাব, যা বিশ্বব্যাপী সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে অনুসৃত হয়। অন্যদিকে, শিয়া মুসলিমদেরও নিজস্ব ফিকহী মাজহাব রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো;

  • জাফরি মাজহাব – যার প্রতিষ্ঠাতা: ইমাম জাফর আস-সাদিক (রহ.)

এছাড়াও ইসলামি আইনের অন্যান্য কিছু শাখা ও ব্যাখ্যার প্রচলন রয়েছে, তবে উপরোক্ত মাজহাবগুলোই প্রধান ধারা হিসেবে গণ্য করা হয়।

এখন কথা হচ্ছে আপনি কোনটা মানবেন বা পালন করবেন? এইটা জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই ইসলামের গ্রন্থ ও হাদিস সম্পর্কে জ্ঞানার্জ ন করতে হবে তবেই আপনি এইসব বিষয় নিয়ে রিসার্চ করতে পারবেন। আর এই রিসার্চ করে যদি যে সবগুলোই পালন করার মতো তাহলে তাই পালন করবেন আর নইতো যেইটা সহিহ সেইটা পালন করবেন। এইটা করতে পারলে আর নিদিষ্ট কোন মাজহাবকে ফলো করার প্রয়োজন হবেনা। আর এই কাজটাই করে থাকেন বাংলাদেশ আহলেহাদীস আন্দোলন নামক এই সংগঠনটি। 

এইবার চলুন তাহলে শিয়া ও সুনি সম্পর্কে একটু বিস্তারিথ ভাবে জেনে নেওয়া যাক। 

সুন্নি ও শিয়া পার্থক্য ও এদের পরিচয়

সুন্নি-ও-শিয়া-পার্থক্য-ও-এদের-পরিচয়

সুন্নি মুসলমান কারা

সুন্নি মুসলমানরা হলেন ইসলামের সেই অনুসারীরা, যারা নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর সুন্নাহ (চলন-বলন, শিক্ষা ও অভ্যাস) এবং সাহাবাদের (নবীর সঙ্গী) অনুসরণ করেন। "সুন্নি" শব্দটি এসেছে "আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহ" থেকে, যার অর্থ “সুন্নাহ ও জামা’আতের অনুসারী”।

সুন্নি মুসলিমদের বৈশিষ্ট্য

চার মাজহাবের অনুসারী: হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি ও হানবলি। খিলাফতের প্রতি বিশ্বাসী: তারা মনে করেন, আবু বকর (রা.) ছিলেন নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রকৃত খলিফা। সাহাবাদের প্রতি সম্মান; তারা সকল সাহাবাকে শ্রদ্ধা করেন এবং মনে করেন, তাঁরা সকলেই ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। বিশ্বাসের মূল ভিত্তি: কুরআন ও হাদিসের ওপর নির্ভরশীল, পাশাপাশি ইজমা (সম্মিলিত মতামত) এবং কিয়াস (যুক্তিগত সিদ্ধান্ত) গ্রহণ করেন। নবী (সা.)-কে আল্লাহর সর্বশেষ নবী মনে করেন: এবং তিনি মৃত্যুর পর আর কারও ইমামত বা নেতৃত্ব নিযুক্ত করেননি বলে বিশ্বাস করেন।

শিয়া মুসলমান কারা

শিয়া মুসলমানরা হলেন সেই সম্প্রদায়, যারা বিশ্বাস করেন যে, নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর প্রকৃত উত্তরসূরি বা খলিফা হচ্ছেন ইমাম আলী (রা.) ও তাঁর বংশধররা। "শিয়া" শব্দটি এসেছে "শিয়াতু আলি" থেকে, যার অর্থ "আলির অনুসারী"।

শিয়া মুসলিমদের বৈশিষ্ট্য

ইমামতের ধারণা: তারা বিশ্বাস করেন, নবী (সা.) তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে আলি (রা.)-কে মনোনীত করেছিলেন এবং আল্লাহর নির্দেশেই পরবর্তী ইমামগণ নির্ধারিত হন।

আরও পড়ুনঃ ময়মনসিংহ জেলার সেহেরী ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৫

বারো ইমামের প্রতি বিশ্বাস: বেশিরভাগ শিয়া (বিশেষ করে ইমামিয়া বা জাফরি মাজহাবের অনুসারীরা) মনে করেন, ইসলামের প্রকৃত নেতৃত্ব বারো ইমামের হাতে ছিল।

সাহাবাদের প্রতি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি: কিছু সাহাবার ভূমিকা নিয়ে শিয়ারা সমালোচনামূলক মনোভাব পোষণ করেন, বিশেষ করে আবু বকর, উমর ও উসমান (রা.)-এর বিষয়ে।

আশুরার বিশেষ গুরুত্ব: শিয়ারা মনে করেন, কারবালার ট্র্যাজেডি ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যেখানে ইমাম হুসাইন (রা.) শহীদ হন।

তাওস্সুল ও শাফায়াতের বিশ্বাস: তারা মনে করেন, ইমামরা বিশেষভাবে ন্যায়পরায়ণ এবং তারা কিয়ামতের দিন সুপারিশ করতে সক্ষম।

সুন্নি ইসলাম ও শিয়া ইসলাম এর কিছু মূল পার্থক্য

বিষয়ে পার্থক্য সুন্নি ইসলাম শিয়া ইসলাম
নেতৃত্ব সাহাবাদের খলিফাদের গ্রহণ করেন ইমাম আলি (রা.) ও তাঁর বংশধরদের অনুসরণ করেন
প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.) আলি (রা.)
ইমামত ধর্মীয় নেতৃত্ব প্রয়োজন নেই ইমামরা নির্ধারিত ও অপরিহার্য
সাহাবাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি সকল সাহাবাকে সম্মান করেন কিছু সাহাবার বিরুদ্ধে আপত্তি আছে
হাদিসের উৎস প্রধানত বুখারি, মুসলিমসহ ছয়টি কিতাব নিজেদের বিশেষ হাদিস গ্রন্থ (যেমন, আল-কাফি)
সুন্নি ও শিয়ার মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও উভয়ই মুসলমান এবং কুরআনকে সর্বোচ্চ ধর্মগ্রন্থ হিসেবে গ্রহণ করে।

তারাবির নামাজ তাহলে কয় রাকাত পড়বেন

ড. জাকির নায়েক তার এক বক্তৃতায় বলেন নবির সুন্নত ১১ রাকাত এর মধ্যে ৮ রাকাত ছিলো তারাবিহ হিসেবে এবং ৩ রাকাত ছিলো বেতের নামাজ হিসেবে। তবে তিনি অনেক সময় নিয়ে পড়তেন। 

তারাবিহ-নামাজ-কতো-রাকাত-পড়বেন-৮-নাকি-২০

ড. আজাহারি বলেন তারাবিহ নামাজ মূলত নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সা) ১১ রাকাত পড়তেন। তবে বর্তমান সময়ে এইটা একটি বিতর্কি

ত বিষয় হওয়ার কারণে তিনি সবাইকে বেশি বেশি ইবাদত করার কথা বলেন। আর তারাবিহ নামাজ যেহেতু একটি নফল ইবাদত তাই কেউ যদি না পড়ে তাহলেও পাপ হবোন। আর কেউ বেশি বেশি পড়লেও পাপ হবেনা বরং সওয়াবই হবে। তাই তিনি বেশি বেশি মানে ২০ রাকাত পড়ার কথা বলেছেন।

আবার আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন বলেন তারাবিহ নামাজ ২০ রাকাত। সবাইকে ২০ রাকাত পড়ার কথা বলেছেন। 

এইদিকে বাংলাদেশ আহলেহাদিস আন্দোলনের একজন অন্যতম আলেমে দ্বিন আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ তিনি তার সকল হাদিস ও প্রমাণ ১১ রাকাতের পক্ষে দেখিয়েছেন। 

মূলত আলেম এবং কোরআন বিশ্লেষকরা বর্ণনা করেছেন এই ২০ রাকাত ওমর (রা) এর আমল থেকে চালু হয়েছে। এই তারাবিহ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অনেক হাদিস আছে। তবে বিতর্কিত বিষয় নিয়ে ইসলামকে বেশি ঘোলা না করাই শ্রেয় হবে।

এখন কথা হচ্ছে তাহলে আমরা কয় রাকাত পড়বো?  এই বিষয়ে বেশিরভাগ বড় বড় বক্তারাই বলেন এইটা যেহেতু একটা নফল ইবাদত তাই এইটা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করার প্রয়োজন নাই। যে যেইটা পড়বে পড়ুক তারপরেও যেনো তারা নমাজমুখি বা মসুজিদমুখি হয়। শুধু শুধু এই বির্তকের বিষয় নিয়ে কেনো বাবাবাড়ি করবো তাছাড়া এই নামাজ পড়াতো কোন পাপ কাজ নয় যে যত বেশি ২ রাকাত ২ রাকাত করে এই নফল ইবাদত করতে পারবে সে তত বেশি সওয়াব পাবে। 

মন্তব্য বা শেষ কথা

এখন সবকিছু পড়ে বুঝে শুনে আপনি কত রাকাত পড়বেন সেইটা আপনার বিষয়। তবে মনে রাখবেন নবিজি দীর্ঘসময় ধরে নামাজ পড়েছেন। তবে আমার মনে হয় অমোনযোগ আর দ্রুততার সাথে ২০ রাকাত না পড়ে মনোযোগ সহকারে ৮ রাকাত পড়াই ভালো। আর যদি সম্ভব হয় মনোযেোগ সহকারে আপনি ২০ রাকাত নামজই পড়েন। রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস বেশি বেশি করে দোয়া করেন এবং নামাজ আদায় করেন। আল্লাহুর ইবাদতে মশগুল থাকেন।

আরও পড়ুনঃ খুলনা জেলার সেহেরী ও ইফতারের সময় সূচি ২০২৫

পরিশেষে বলি এইটা যেহেতু ধর্মীয় পোস্ট তাই যদি কোন প্রকার ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সেই সাথে কারো মনে কষ্ট পেয়ে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন কারণ আমি আপনাদেরি একজন মুসলিম ভাই। কোন পরামর্শ দেওয়ার থাকলে তা কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন এই প্রত্যাশা রাখবো। সকলে সুস্থ্য থাকবেন এবং ভালো থাকবেন এই আশা রাকি আসসালামু আলাইকুম। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ABM Creative IT'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url