শসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

শসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, এই সম্পর্কে আজকের পোস্টটি হতে চলেছে সেইটা হয়তো আর আপনার বুঝতে বাকি নেই। আসলে এই শসা এমন একটি পুষ্টিকর ফল যা অন্য সকল ফলের মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী একটি একটি ফলজ উদ্ভিদ। 
শসা-খাওয়ার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
এই ফল একটা মানুষের দেহের জন্য কতোটা উপকারি তা যদি কেউ জানতো তাহলে তার সামর্থ অনুসারে প্রতিদিন এই শসা প্রয়োজনে এবং অপ্রয়োজনে খেতেই থাকতো। কেনো খাইতো সেইটা ভাবছেন? চলুন তাহলে নিচের বিশ্লেষণ থেকে জেনে আসি বিস্তারিত। 

সূচিপত্রঃ শসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

শসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

শসা একটি বারোমাসি ফল। সারা বছর এর ফলন হয় এবং পাওয়া যায়। শসা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। এতে ভিটামিন, খনিজ লবণ, পটাশিয়াম, এন্টি অক্সিডেন্ট, ও প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। নিয়মিত শসা খেলে আমাদের চোখ, নখ, চুল, ত্বক, কিডনি ও শরীরের অনেক উপকার করে।

আরও পড়ুনঃ লেবুর খোসা খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা

শসা খাওয়ার উপকারিতা: শসা অনেক গুণী একটি ফল। এর গুণ বা উপকার বলে শেষ করা যাবে না।

১. শসাতে ৯৫ ভাগ পানি আছে যা আমাদের শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে।

২. শসায় ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম থাকে। এর ফলে শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।

৩. শসায় পানির পরিমাণ বেশি থাকায় গ্ৰীষ্মকালে নিয়মিত শসা খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে।

৪. শসায় এন্টি অক্সিডেন্ট আছে যা আমাদের ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করে। এবং ত্বকের কালো দাগ, ছোপভাব ও ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

৫. শসা গোল করে ২ পিস কেটে চোখে ১০-১২ মিনিট রাখলে চোখ ফুলে যাওয়া কমায় এবং চোখের নিচের কালো দাগ দূর করে।

৬. শসা নিয়মিত খেলে শসায় থাকা খনিজ সিলিকা চুল বাড়তে সাহায্য করে ও চুল সতেজ রাখে। এছাড়াও নখ শক্ত ও সতেজ রাখে।

৭. শসায় বিটা ক্যারোটিন আছে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এবং প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় রক্ত পরিষ্কার করে ‌

৮. শসা নিয়মিত খেলে গ্যাস্ট্রিক,আলসারের মতো রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৯. শসায় ভিটামিন এ, বি, সি ও ভিটামিন কে বিদ্যমান, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হাড় শক্ত করে, রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে।

১০. নিয়মিত শসা খেলে পেট পরিষ্কার করে, দ্রুত হজম ক্ষমতা বাড়ায়, এছাড়াও হার্ট ভালো রাখে। ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত শসা খেলে শরীরের অনেক উপকার হয়। শসা রক্তে সুগারের মাত্রা কম রাখতে সাহায্য করে।

শসা-খাওয়ার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

এছাড়াও শসা আমাদের শরীরের আরও অনেক অনেক উপকার করে। তাই আমাদের নিয়মিত শসা খাওয়া উচিত।

শসা খাওয়াই সৌন্দর্যের জন্য উপকারিতা

শসা শুধু শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য নয়, এটি সৌন্দর্যের জন্যও দারুণ কার্যকরী। নিয়মিত শসা খাওয়ার মাধ্যমে ত্বক, চুল ও চোখে আশ্চর্যজনক পরিবর্তন আসে। আসুন জেনে নিই শসা খাওয়ার ফলে কীভাবে আমাদের সৌন্দর্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

১. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়

শসার ৯৫% অংশই পানি, যা শরীরকে হাইড্রেট রাখে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে। এর ফলে ত্বক মসৃণ, কোমল ও উজ্জ্বল হয়। শসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি ত্বকের ভেতর থেকে দীপ্তি বাড়ায়।

২. ব্রণ ও ব্ল্যাকহেডস কমায়

শসার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকের লালচে ভাব কমায় এবং ব্রণ প্রতিরোধ করে। নিয়মিত শসা খেলে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ হয়, ফলে ব্ল্যাকহেডস ও ব্রণের সমস্যা কমে যায়।

৩. চুলের স্বাস্থ্য ভালো হয়

শসায় উপস্থিত সিলিকা, সালফার ও ভিটামিন কে চুলের গোঁড়া মজবুত করে এবং চুল পড়া কমায়। পাশাপাশি এটি মাথার ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক রেখে খুশকি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

আরও পড়ুনঃ পাকা বেল খাওয়ার উপকারিতা

৪. ডার্ক সার্কেল ও চোখের ফোলা ভাব দূর হয়

শসার প্রাকৃতিক ঠান্ডা অনুভূতি চোখের নিচের ফোলা ভাব কমায় ও ডার্ক সার্কেল হালকা করে। এছাড়া, এতে থাকা ভিটামিন কে ও ফাইটোকেমিক্যালস চোখের চারপাশের ত্বকের টোন ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে সৌন্দর্য বাড়ায়

শসা ক্যালোরি-বিহীন একটি খাবার, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে ত্বক আরও টানটান ও সুগঠিত দেখায়, যা সৌন্দর্যের অন্যতম চাবিকাঠি।

শসা খাওয়ার ফলে শারীরিক পরিবর্তন

শসা শুধু সৌন্দর্যের জন্যই নয়, এটি শরীরের ভেতরেও নানা ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। নিয়মিত শসা খেলে শরীর সুস্থ, হাইড্রেটেড ও কর্মক্ষম থাকে। চলুন জেনে নিই, শসা খাওয়ার ফলে শরীরে কী ধরনের পরিবর্তন আসে।

১. হাইড্রেশন বাড়ায়

শসার ৯৫% পানি, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পর্যাপ্ত পানি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিকমতো কাজ করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।

২. ওজন কমাতে সাহায্য করে

শসা ক্যালোরি-বিহীন একটি খাবার এবং এতে প্রচুর ফাইবার আছে, যা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ফলে বারবার খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায় এবং ওজন কমানো সহজ হয়।

৩. হজমশক্তি উন্নত করে

শসায় থাকা ফাইবার ও পানি হজমক্রিয়াকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি অন্ত্রের গতি বাড়িয়ে দেয়, ফলে খাবার দ্রুত হজম হয় এবং গ্যাস বা পেট ফাঁপার সমস্যা কমে যায়।

৪. ডিটক্সিফিকেশন বাড়ায়

শসা প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়, যা লিভার ও কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

৫. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

শসায় উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

৬. হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে

শসার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে। এটি খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়, যা হার্টের জন্য উপকারী।

৭. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে

শসায় থাকা প্রাকৃতিক উপাদান ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।

৮. শক্তি বাড়ায় ও ক্লান্তি দূর করে

শসায় ভিটামিন বি ও কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা শরীরকে দ্রুত শক্তি দেয় এবং ক্লান্তিভাব দূর করে। বিশেষ করে গরমের দিনে শসা খেলে শরীর চাঙ্গা লাগে।

জমি থেকে শসা সংগ্রহ করার নিয়ম

শসা জমি থেকে সঠিকভাবে সংগ্রহ করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম অনুসরণ করা প্রয়োজন। সঠিক পদ্ধতিতে শসা সংগ্রহ করলে ফসলের গুণগত মান ভালো থাকে এবং গাছ দীর্ঘ সময় ধরে ফলন দিতে পারে। নিচে ধাপে ধাপে শসা সংগ্রহের নিয়ম দেওয়া হলো:

১. সঠিক সময় নির্বাচন

সাধারণত শসা বীজ বপনের ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে সংগ্রহের উপযোগী হয়। শসা ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হলেই সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। পরিপক্ব শসার রং সাধারণত গাঢ় সবুজ হয় এবং আকার নির্ভর করে শসার জাতের ওপর। খুব বেশি পাকা বা হলুদ হওয়া শসা সংগ্রহ করা ঠিক নয়, কারণ এটি খাওয়ার অনুপযোগী হতে পারে।

২. সকালে বা বিকেলে সংগ্রহ করুন

সকালবেলা বা বিকেল বেলা শসা সংগ্রহ করা উত্তম, কারণ তখন তাপমাত্রা কম থাকে এবং শসার সতেজতা বজায় থাকে। দুপুরের রোদে শসা সংগ্রহ করলে এটি দ্রুত শুকিয়ে যেতে পারে।

৩. শসা কাটার পদ্ধতি

শসা কখনোই টেনে বা জোর করে গাছ থেকে ছেঁড়া উচিত নয়, এতে গাছের ক্ষতি হতে পারে। শসার ডাঁটি রেখে ফল সংগ্রহ করতে হলে ধারালো কাঁচি বা চাকু ব্যবহার করুন। শসার ডাঁটি ১-২ সেন্টিমিটার রেখে কাটলে সংরক্ষণ ভালো হয়।

৪. সংগ্রহের পর সংরক্ষণ

শসা সংগ্রহের পর দ্রুত ছায়াযুক্ত ও ঠান্ডা স্থানে রাখা উচিত। সরাসরি রোদে রেখে দিলে শসা নরম হয়ে যেতে পারে। শসা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে হলে ১০-১২°C তাপমাত্রায় রাখতে হবে।

৫. নিয়মিত সংগ্রহ করুন

প্রতিদিন বা একদিন পরপর শসা সংগ্রহ করা ভালো, কারণ এতে গাছ থেকে নতুন ফুল ও ফল বেশি হবে। অনেকদিন ধরে শসা গাছে রেখে দিলে গাছের ফলন কমে যেতে পারে।

শসা-খাওয়ার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

এই নিয়মগুলো মেনে চললে শসা দীর্ঘদিন ধরে ভালোভাবে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।

শসা খাওয়ার কিছু অপকারিতা সমূহ

শসা আমাদের শরীরের উপকারের পাশাপাশি কিছু অপকারও করে।

১. অতিরিক্ত পরিমাণে শসা খেলে শরীরে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান কমে যায়।

২. খালি পেটে অতিরিক্ত শসা খেলে বমি বমি ভাব হয়।

৩. অতিরিক্ত শসা খেলে বদহজম হয় এছাড়াও পেট ফাঁপা সমস্যা হয়।

৪. অতিরিক্ত পরিমাণে শসা খেলে শরীরে রক্তের পরিমাণ কমে যায়।

৫. অতিরিক্ত পরিমাণে শসা খেলে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়। গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়ায় মাথা ঘোরানোর মতো আরও অনেক সমস্যা দেখা দেয়।

শেষ কথা

শসা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি ফল। এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। এছাড়াও আমাদের চোখ, চুল, ও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। শসা খেলে যেমন আমাদের শরীরের উপকার করে ঠিক তেমনই উপকারও করে। তাই আমাদের শরীরের কথা ভেবে পর্যাপ্ত পরিমাণে শসা খাওয়ার। অতিরিক্ত পরিমাণে শসা না খেয়ে প্রতিদিন একটি করে শসা খেলে আমাদের শরীরেরও উপকার হবে আবার কোনো ক্ষতিও করবে না।

আরও পড়ুনঃ থানকুনি গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

শসা খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরের পাশাপাশি সৌন্দর্যেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। এটি ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে, ব্রণ প্রতিরোধ করে, চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও চোখের ক্লান্তি কমায়। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শসা যুক্ত করুন এবং প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল ও সতেজ থাকুন! শসা খাওয়া শুধু শরীর ঠান্ডা রাখে না, বরং এটি হজমশক্তি উন্নত করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং ডিটক্সিফিকেশন বাড়ায়। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শসা রাখুন এবং সুস্থ জীবনযাপন করুন!

এতোক্ষণ সময় দিয়ে  পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। এই রকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের এই সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন এবং আমাদের পাশেই থাকুন। আপনি কি ধরনের পোস্ট পড়তে আগ্রহী সেইটা কমেন্ট করে জানাবেন আপনাদের চাহিদার প্রাধান্য দিয়ে আমাদের পোস্টগুলো প্রস্তুত করবো ইনশাআল্লাহ। আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি, এই লিখনির মাঝে কোন প্রকার ভুল থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ABM Creative IT'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url