রসুন এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

রসুন একটি প্রাকৃতিক ভেষজ যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ওষুধ এবং খাদ্য উপাদানের মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি শুধুমাত্র রান্নার স্বাদ বাড়ানোর জন্যই নয়, বরং স্বাস্থ্যের জন্যেও অত্যন্ত উপকারী। 

রসুন-এর-পুষ্টিগুণ-ও-উপকারিতা

এই ব্লগ পোস্টে আমরা রসুনের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি এই পোস্টের শেষ পর্যন্ত থাকবেন আর এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে শ্রবণ ও কর্ণপাত করবেন। চলুন তাহলে এই ভেষজ রসুনের কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক। 

সূচিপত্রঃ রসুন এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা 

রসুন এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা 

রসুন মসলা জাতীয় ঔষধি গুণ সম্পন্ন একটি খাদ্য উপাদান যা রান্নায় অনন্য স্বাদ যুক্ত করে। শক্তিশালী সুঘ্রাণের কারনণ মাছ, মাংস, সবজি থেকে শুরু করে কাচ্চি, কারি রান্না রসুন ছাড়া চিন্তাই করা যায় না। শুধু রান্নায় স্বাদকে বাড়ানোর ক্ষেত্রে নয়, রসুনের পুষ্টিগুন রসুনকে পৌঁছে দিয়েছে মসলার অন্যতম তালিকার মধ্যে। রসুনকে অনেকেই বলে থাকে ‘পাওয়ার হাউস অব মেডিসিন অ্যান্ড ফ্লেভার’। 

আরও পড়ুনঃ পাঁচমিশালি সবজির লাবরা তৈরির রেসিপি

ভিটামিন ও মিনারেলের পাশপাশি রসুনে আছে সালভারভিত্তিক যৌগ অ্যালিসিন, যা অনেক রোগ নিরাময়ে কাজ করে থাকে। নিয়মিত কাঁচা বা সিদ্ধ রসুন সেবনে শরীর সুস্থ থাকে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও ব্যাধি দূর হতে সহায়তা করে থাকে। কাঁচা রসুন চিবিয়ে খাওয়ায় শরীরে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাশ প্রতিরোধী ক্ষমতা তেরি হয়। 

রসুন-এর-পুষ্টিগুণ-ও-উপকারিতা

রসুনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

রসুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, যা আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে থাকে। রসুন নানা পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধে ভরা একটি ভেষজ। প্রতি ১০০ গ্রাম রসুনে কি পরিমাণ বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে তার বিস্তারিত তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো-                  

ক্রমিক নং উপাদান পরিমাণ
০১ খাদ্যশক্তি ১৪৯ কিলোক্যালরি
০২ আমিষ ৬.৩৬ গ্রাম
০৩ শর্করা ৩৩.০৩ গ্রাম
০৪ ফাইবার ২.১ গ্রাম
০৫ কোলেস্টেরল ০ মিলিগ্রাম
০৬ চর্বি ০.৫ গ্রাম
০৭ ভিটামিন-এ ৯ আইইউ
০৮ ভিটামিন-সি ৩১.২ মিলিগ্রাম
০৯ পটাশিয়াম ৪০১ মিলিগ্রাম
১০ ক্যালসিয়াম ১৮১ মিলিগ্রাম
১১ সোডিয়াম ১৫৩ মিলিগ্রাম
১২ ম্যাগনেসিয়াম ২৫ মিলিগ্রাম
১৩ ফসফরাস ১৫৩ মিলিগ্রাম
১৪ লৌহ ১.৭০ মিলিগ্রাম
১৫ জিংক ১.১৬ মিলিগ্রাম

এছাড়াও রসুনে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং সালফার-যুক্ত যৌগ, যা একে আরও কার্যকর করে তোলে।

রসুন-এর-পুষ্টিগুণ-ও-উপকারিতা

রসুনের স্বাস্থ্য উপকারিতা

  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: রসুন রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: রসুনে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি সাধারণ সর্দি-কাশির মতো সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর।

আরও পড়ুনঃ চিকেন বারবিকিউ তৈরির সহজ রেসিপি

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: রসুন রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়।
  • অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য: রসুনে থাকা যৌগগুলি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা বাত ও হাড়ের সমস্যায় কার্যকর হতে পারে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক: গবেষণায় দেখা গেছে, রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষ করে পাকস্থলী এবং কোলন ক্যান্সার।
  • হজমশক্তি বাড়ায়: রসুন হজমে সহায়তা করে এবং অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি促 করে, যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান করতে পারে।
  • ডিটক্সিফিকেশন বা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়
  • চুল ও ত্বকের যত্নে কার্যকর: রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক। রসুন লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।

রসুন এর উপকারিতা সমূহ

রসুন-এর-পুষ্টিগুণ-ও-উপকারিতা

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে 

রসুন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের মহা ঔষুধ, যারা উচ্চ রক্তচাপে ভূগিন রসুন খাওয়ার ফলে তাদের উচ্চ রক্তচাপ অনেকটা কমে যায়। তাছাড়াও রসুন হৃদপিন্ডের সুস্থতায় কাজ করে, কোলেস্টেরন কমায়। এতে করে হার্ট অ্যাটাকের ঝূঁকি কমে। 

প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক 

গবেষণায় দেখা গেছে রসুন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক এর মত কাজ করে। খালি পেটে রসুন খেলে শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াসমূহ ধ্বংস করে ফেলে। ব্যাকটেরিয়া ও জীবানুঘটিত রোগ প্রতিরোধে হাজার বছর ধরেই রসুন ব্যবহৃত হয়। শিশুদের কৃমি দুর কেরতে রসুন ভালো কাজ করে। 

শরীরকে বিষমুক্ত করে রসুনের অবদান

শরীরকে ডি-টক্সিফাই করতে রসুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রসুন প্যারাসাইট, কৃমি পরিত্রাণ, জিদ, সাক্সঘাতিক জ্বর, ডায়াবেটিস, বিষন্নতা এবং ক্যান্সার এর মত বড় বড় রোগ প্রতিরোধ করতে অনেক উপকারী। খালি পেটে রসুন খাওয়ার ফলে যকৃত এবং মূত্রাশয় সঠিকভাবে নিজ নিজ কার্য সম্পাদনা করে। 

হৃদরোগ থেকে বাঁচতে রসুনের ভূমিকা

রসুন কোলেস্টরল কমাতে খুবই সহায়ক। এই কারনে হার্ট  অ্যাটাকের ঝূঁকি কমে থাকে। প্রতিদিন রসুনের কয়েকটি কোয়া সেবনে কেলেস্টেরলের মাত্রা কমে থাকে। আর রক্তচাপ ও রক্ত চিনির মাত্রা ঠিক রাখতেও রসুন কাজ করে। রসুনের মধ্যে থাকা সালফার-ভিত্তিক যৌগ অ্যালিসিন মূলত স্বাস্থ্যে এই ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। মনে রাখতে হবে, রসুন কাঁচা সেবন সবচেয়ে ভালো। সিদ্ধ করা হলে অ্যালিসিনের ঔষুধি গুণ কমে যায়। 

ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে রসুন

নিয়মিত রসুন সেবনে শরীরে সব ধরনেব ক্যান্সার প্রতিরোধক্ষমতা তেরি হয়। প্রতিদিন কাঁচা ও রান্না করা রসুন সেবনের মাধ্যমে পাকস্থলী ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। রসুন প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধেও অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। 

ত্বক ও চুলের যত্নে রসুন

নিয়মিত রসুন সেবনে বয়সের ছাপ দূর হয় এবং ত্বক অনেক সুন্দর হয়। এ ছাড়া রসুন ভাঙ্গাশ ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে ত্বক কে রক্ষা করে। আর চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজাতে রসুন ভালো কাজ করে। 

রসুন-এর-পুষ্টিগুণ-ও-উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে রসুনের কার্যকারিতা

নিয়মিত রসুন সেবনের ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ঋতু পরির্বতনের সময় স্বাস্থগত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রসুন শিরা-উপশিরায় পাক জমাতে বাধা প্রদান করে। এছাড়াও রসুন রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন নিয়ম করে কয়েক কোয়া কাঁচা রসুন খেলে শরীরের যৌবন দীর্ঘস্থায়ী হয়। রসুনের মধ্যে সকল রোগ আরোগ্যের করার উপায় সৃষ্টিকারী উৎস বিদ্যামান রয়েছে। রসুন যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, ফুসফুসের কনজেশন, হাপানি, হুপিং কাশি ইত্যাদি প্রতিরোধ করে এই রসুন। 

রসুন ব্যবহারের উপায়

  • কাঁচা রসুন খাওয়া: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১-২ কোয়া কাঁচা রসুন খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • রান্নার উপাদান হিসেবে ব্যবহার: রান্নায় রসুন ব্যবহার করলে এটি খাবারের স্বাদ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা বাড়ায়।
  • রসুনের তেল ব্যবহার: চুল ও ত্বকের যত্নে রসুনের তেল সরাসরি ব্যবহার করা যেতে পারে।

রসুন থেকে সতর্কতা

চিকিৎসকের পরার্মশ ছাড়া দিনে দু-তিনটির বেশি রসুনের কাঁচা কোয়া খাওয়া যাবে না। হাঁপানি রোগী বা ম্বাসকষ্ট আছে এমন ব্যক্তিরা রসুন ব্যবহারে সাবধান থাকুন। যাদের রসুনে অ্যালার্জি আছে তাদের রসুন না খাওয়াই ভালো। অপারেশনের আগে রসুন সেবন বন্ধ রাখতে হবে। অতিরিক্ত রসুন খেলে নিঃশ্বাসে, বমিভাব হতে পারে। 

আরও পড়ুনঃ টমেটো দিয়ে মুরগীর মাংস রান্নার রেসিপি

রসুন অত্যন্ত উপকারী হলেও অতিরিক্ত গ্রহণ করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত রসুন খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ গ্রহণকারী ব্যক্তিদের জন্য বেশি রসুন খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। রসুনের প্রতি সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য এটি এলার্জির কারণ হতে পারে।  

মন্তব্য

রসুন একটি প্রাকৃতিক ঔষধি, যা শরীরের জন্য বহু উপকার বয়ে আনে। এটি সঠিক মাত্রায় গ্রহণ করলে স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, যাদের কোনো স্বাস্থ্যের জটিলতা আছে, তাদের অবশ্যই রসুন খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিয়মিত রসুন খেয়ে সুস্থ ও সতেজ থাকুন! আশা করি আজকের এই ইনফরমেটিভ পোস্টটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। আশা করবো আপনি এইগুলো সঠিক ভাবে মেনে চলবেন। 

আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে। সেই পর্যন্ত সকলেই ভালো থাকবেন। আর আমাদের পাশেই থাকবেন। নতুন নতুন পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের এই সাইটটি ভিজিট করুন। এছাড়াও আপনি কি ধরনের পোস্ট চাইছেন তা কমেন্ট করে জানিয়ে দিতে ভুলবেন না। কোন প্রকার ভুল তথ্য থাকলে তা অবশ্যই কমেন্টে জানিয়ে দিবেন এবং সেই ভুলগুলোকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আল্লাহাফেজ ও আসসালামু আলাইকুম। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ABM Creative IT'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url