নাক ডাকার কারণ ও বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়

নাক ডাকা খুব সাধারণ একটা সমস্যা। এটা কোনো বড় ধরনের রোগ নয়। কোনো ব্যক্তি যখন ঘুমের মধ্যে শ্বাস নেয়ার সময় কর্কশ শব্দ করে তখন সেটাকেই নাক ডাকা বলা হয়। 

নাক-ডাকার-কারণ-ও-বন্ধ-করার-ঘরোয়া-উপায়

নারী, পুরুষ বা শিশু যে কারো এই সমস্যা হতে পারে। তবে মাঝে মাঝে এটা ঝূঁকিপূর্ণ হতে পারে। আর এই নাক ডাকা অনেকেরই বিরক্তের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

নাক ডাকার কারণ

ঘুমের মধ্যে শ্বাসনালী সংকুচিত হলে বা শ্বাস নিতে বাধা পেলে নাক ডাকা হয়। এর কারণে নাকের ভেতরের নরম টিস্যুগুলো কাঁপতে থাকে, ফলে বিভিন্ন রকম শব্দ হয়। যা আমাদের বিব্রত করে। বিভিন্ন কারণে নাক ডাকা হয়, যেমন: কোনো কারণে নাক বন্ধ হয়ে গেলে, অনেক ওজন হলে, ঘুমের অবস্থানের কারণে বা টনসিলের সমস্যা থাকলে।

নাক বন্ধ হয়ে গেলে

নাক বন্ধ থাকলে অনেক সময় নাক ডাকা হয়। এলার্জি, সর্দি বা নাকে স্লেসা জমে গেলে অনেক সময় নিঃশ্বাস গ্ৰহণে বাধা প্রদান করে। ফলে ব্যক্তি নাক ডাকে।

টনসিল 

টনসিল ফুলে গেলে অনেক সময় নাক ডাকার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। টনসিল বেড়ে গেলে শ্বাসনালীতে বায়ু ঢুকতে বাধা দেয়। এছাড়া টনসিল বেড়ে গেলে শ্বাসনালী সরু হয়ে যায়। যার ফলে মানুষ অনেক সময় নাক ডাকে।

অতিরিক্ত ওজন

যাদের শরীরের ওজন বেশি তাদের নাক ডাকার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। কারো শরীরে চর্বি বেশি জমে গেলে বিশেষ করে ঘাড় বা গলার কাছে চর্বি বেশি জমে গেলে শ্বাস নিতে বাধা দেয়। ফলে সে ব্যক্তি নাক ডাকে।

ঘুমানোর অবস্থান 

ঘুমের মধ্যে ঘাড় বাঁকা হয়ে থাকলে অনেক সময় নাক ডাকা হয়।ঘাড় বাঁকা থাকার কারণে শ্বাসনালীতে বায়ু প্রবাহে‌ বিঘ্ন ঘটে। ফলে মানুষ নাক ডাকে।

নাকের কোনো সমস্যা

নাকের ভেতরের হাড় বা মাংস বেড়ে গেলে অনেক সময় নাক ডাকার সমস্যা দেখা দেয়। নাকের ভেতরের পলিপাস ব্যক্তির শ্বাস গ্রহণে বাধা প্রদান করে। ফলে ব্যক্তি নাক ডাকে।

অ্যালকোহল সেবনে 

অ্যালকোহল খেলে গলার ভেতরে যে পেশিগুলো থাকে তা শিথিল হয়ে যায়। ফলে শ্বাসনালী ব্লক হয়ে যায়। যার কারণে ওই ব্যক্তি তখন নাক ডাকে।

নাক ডাকার ফল 

নাক ডাকা খুব স্বাভাবিক। যেকেউ যেকোনো কারণে নাক ডাকতে পারে। বেশিরভাগ সময় এটা কোনো সমস্যা হয় না । তবে বেশি বেশি নাক ডাকা মাঝে মাঝে মারাত্মক ক্ষতি করে। যেমন-
  • ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে জোরে জোরে নাক ডাকতে থাকে। ফলে অন্যদের ঘুমাতে অসুবিধা হয়।
  • ঘুমের মধ্যে মাঝে মাঝে গোঙানির মত শব্দ হয়। মাঝে মধ্যে হাঁপাতে থাকে।
  • ঘুম অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
  • মেজাজ খিটখিটে থাকে।
  • স্মৃতি শক্তি হ্রাস পায়।
  • দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাব থাকে।
  • মুখ খুলে শ্বাস নেওয়ার কারণে অনেক সময় গলা শুকিয়ে যায়। আবার মাঝে মধ্যে গলা ব্যথা করে।
  • বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
  • যেকোনো বিষয় বা কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হয়।
  • নাক ডাকার ঝুঁকি: কিছুক্ষেত্রে নাক ডাকা ঝূঁকিপূর্ণ হতে পারে। যেমন:
  • শরীরের অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। ফলে হার্টের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
  • ব্রেনে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়।
  • ক্লান্তি বা মাথাব্যথা হয়।
  • অল্পতেই রেগে যায়।

নাক ডাকার চিকিৎসা 

নাক ডাকার কারণের ওপর ও এর তীব্রতা কেমন তার ওপর ভিত্তি করে এর চিকিৎসা ভিন্ন ভিন্ন।
  • জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে নাক ডাকা রোধ করা যায়।
  • অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • ওজন কমাতে হবে।
  • ম্যান্ডিকুলার অ্যাডভান্সমেন্ট ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে। এটি ব্যক্তির জিহ্বা ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে ঘুমের সময় শ্বাসনালী খোলা থাকে।
  • অনুনাসিক স্প্রে বা ডাইলেটর স্ট্রিপ নাকের ভেতরের বায়ু প্রবাহকে উন্নত করে। ও নাক ডাকা কমাতে সাহায্য করে।
  • ঘুমানোর অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। নাহলে পজিশন প্রশিক্ষণ নিতে হবে। শোয়ার পরিবর্তনও অনেক সময় নাক ডাকা বন্ধে সাহায্য করে।
  • যখন নাক ডাকা গুরুতর হয়ে ওঠে তখন চিকিৎসকরা শ্বাসনালীর অতিরিক্ত টিস্যু অপসারণ করে ফেলে। এবং শ্বাসনালি বড় করার জন্য সার্জারি করে। এতে নাক ডাকা বন্ধ হয়ে যায়।
  • এলার্জি বা সর্দি জাতীয় সমস্যা থাকলে তা নির্মূল করা।
এসব চিকিৎসা করলে‌ই অনেক সময় নাক ডাকা ঠিক হয়ে যায়। এছাড়াও ঘরোয়া কিছু উপায়েও নাক ডাকা বন্ধ করা যায়। সেইসব নাক ডাকা বন্ধের ঘরোয়া উপায়গুলোর নিম্নরূপ-
  • পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে।
  • নিয়মিত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করতে হবে।
  • ভালো ভাবে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। প্রয়োজনে দৈনন্দিন রুটিন মেনে চলতে হবে।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
  • মাথা উঁচু করে ঘুমাতে হবে। এতে শ্বাসনালীর ওপর চাপ পড়ে না। এবং শ্বাস গ্রহণ করতে সুবিধা হয়।
  • এলার্জি বা সর্দি জাতীয় খাবার পরিহার করুন।
  • প্রতিদিন নিজে নিজে গলার ও ঘাড়ের ব্যায়াম করুন। এতে গলা ঘাড়ের পেশি শক্ত হয়। এবং নাক ডাকা কমার সম্ভাবনা থাকে।
নাক-ডাকার-কারণ-ও-বন্ধ-করার-ঘরোয়া-উপায়
এসব অভ্যাস গুলো বজায় রাখতে পারলে নাক ডাকা ধীরে ধীরে কমে যাবে।

শেষ কথা

নাক ডাকা অনেক মারাত্মক কিছু না। তাই এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে অতিরিক্ত হয়ে গেলে এর চিকিৎসা করাতে হবে। আর ঘরোয়া উপায়গুলো অনুযায়ী চললে নাক ডাকা কমে যায় । তাই এই পদ্ধতিগুলো আপনি অনুসরণ করে চলতে পারেন। এতে করে আপনার এই সমস্যাটি দূর হয়ে যাবে আশা করি ইনশাআল্লাহ। 

আরও পড়ুনঃ গরমে তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা - তরমুজ চাষ সম্পর্কে ধারণা

পরিশেষে বলা যায়, উপরোক্ত সমস্যাটি থেকে মুক্তি পেতে এই সকল নিয়ম কানুন মেনে চলতে পারেন। তবে আপনার এই সমস্যাটি দীর্ঘদিনের হয়ে থাকলে হয়তো ভালো হতে অনেক সময় লাগতে পারে। তাই ধৈর্য রাখতে পারেন আপনার মনে। আজকের এই পোস্টটি আপনাদের সকলের জন্যই। বর্তমানে এই সমস্যাটি প্রত্যেকেরই আছে বলা যায়। কোন প্রকার ভুল তথ্য পরিলক্ষিত হলে কমেন্ট তরে জানাবেন এবং ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সকলেই ভালো থাকবেন আল্লাহাফেজ। আসসালামু আলাইকুম। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ABM Creative IT'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url