লাইলাতুল কদরের ইবাদতসমূহ
কারণ এই রাতের ইবাদত হলো হাজার মাসের রাতের ইবাদতের চেয়ে উত্তম ইবাদত। এই রাত নিয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে একটি পূর্ণ সূরা নাজিল করেছেন। আর আমাদের মুসলিম জাতির মহাগ্ৰন্থ আল কোরআনও এই রাতেই নাজিল হয়েছে। তাই এই রাতের ফজিলত অনেক।
সূচিপত্রঃ লাইলাতুল কদরের ইবাদতসমূহ
- লাইলাতুল কদরের ইবাদতসমূহ
- লাইলাতুল কদরের মর্যাদা
- লাইলাতুল কদরের সন্ধান
- লাইলাতুল কদরের ইবাদত
- লাইলাতুল কদরের রাতে আমরা যে সকল ইবাদত করতে পারি
- লাইলাতুল কদরের আমল সমূহ
- শেষ কথা
লাইলাতুল কদরের ইবাদতসমূহ
লাইলাতুল কদর এমন একটি রজনী যেই রজনী হাজার বছরের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এই রজনীতে ইবাদত করলে তা হাজার বছর ধরে ইবাদত করার সমান নেকি বা সাওয়াব পাওয়া যায়। আর তাই এই রাত বা রজনীকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলা হয়েছে। একটি হাদিসে উল্লেখ আছে, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) তার সাহাবীদেরকে তাদের পূর্ব পূরষদের সম্পর্কে বলছিলো, তারা হাজার হাজার বছর জীবিত থাকতো পৃথিবীতে। তাই তারা আল্লাহর অনেক ইবাদত করতে পারতো।
ইবাদত করার জন্য অনেক সময় পেতো। এই কথার প্রেক্ষিতে তার এক সাহাবী জিঙ্গেস করে, তাহলে আমরা তো তাদের মতো ইবাদত করতে পারবো। আমরাতো এতোদিন এই পৃথিবীতে থাকতে পারবো না আমাদের পূর্ব পুরুষদের ন্যায়। তখন নবী তাদেরকে বলেন, অবশ্যই তোমরা তাদের থেকেও বেশি ইবাদত করতে পারবে। আর তাদেরকে সেই শেষ দশকের মধ্যে লাইলাতুল কদরের রাত্রির কথা বলেন।
আরও পড়ুনঃ তারাবিহ নামাজ কতো রাকাত পড়বেন ৮ নাকি ২০
এই রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এই রজনী যদি কেউ পেয়ে যায় তাহলে তার পূর্বের সকল গুণাহ মহান আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেন। সাহাবীরা এই কথা শুনে খুশি হয়ে যায় আর সেই থেকেই এই রজনীর অনুসন্ধান শুরু করে রমজানের শেষ দশকে সকল আল্লাহ ও তার নবী প্রিয় মুসলিমরা। নিম্নে আমরা এই লাইলাতুল কদরের ইবাদত সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা আল্লাহ তায়ালা অনেক বেশি করেছেন। এই রাতেই আল্লাহ পবিত্র কুরআন নাজিল করেছেন প্রিয় রাসুল (সা) এর ওপর। আর যে সকল ব্যক্তি নিজে এই কুরআন ধারণ করে আল্লাহ তার মর্যাদাও দ্বিগুন করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন- নিশ্চয় আমি কুরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদরের রজনীতে।
আপনি কি জানেন মহিমান্বিত কদরের রজনী কী? মহিমান্বিত কদরের রজনী হাজার মাস
অপেক্ষা উত্তম; সে রাতে ফেরেশতাগণ জিবরাঈল (আ) কে সমভিব্যহাবে অবতরণ করেন। তাদের
প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশে ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে । এই
শান্তির ধারা চলতে থাকে ঊষা বা ফজর পর্যন্ত। ( সুরা আল কদর)
লাইলাতুল কদরের সন্ধান
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে নির্দিষ্ট করে এই রাত সম্পর্কে কিছু বলেন নি। তবে আমাদের প্রিয় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- লাইলাতুল কদর কোন রাতে তা তোমাদের জানানোর জন্য আমি বের হচ্ছিলাম, কিন্তু অমুক তমুক ব্যক্তি ঝগড়ায় লিপ্ত থাকার কারণে আমার থেকে তা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আর সম্ভবত এটাই তোমাদের জন্য মঙ্গলকর। (সহিহ বুখারী)
তবে রমজানের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাতগুলোকে লাইলাতুল কদর হিসেবে ধরা হয়।
বর্তমানে বিভিন্ন ওলামায়ে কেরামগণ বলছেন রমজানের শেষ দশ রাতেই আল্লাহর ইবাদত
বন্দেগী করা উত্তম।
লাইলাতুল কদরের ইবাদত
এই রাত হলো হাজার মাসের রাতের থেকে উত্তম একটি রাত। আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা) বলেন- যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সাথে এবং সম্মানের আশায় রমজানের রোজা রাখে ও শবে কদরের রাতে দাঁড়ায়, তার আগেকার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম)
এই রাতগুলোতে সারা রাত আল্লাহর ইবাদতের মধ্য দিয়ে পার করা উচিত। আমাদের প্রিয় রাসুল (সা) রমজানের শেষ দশ রাতে সারারাত আল্লাহর ইবাদত করতেন।
আয়েশা (রা) বলেন- রমজানের শেষ দশ রাত্রি শুরু হলে রাসুল (সা) রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং তার পরিবার বর্গকেও জাগিয়ে তুলতেন।
সুতরাং, আমাদেরও এই রাতগুলোতে সারা রাত জেগে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে।
লাইলাতুল কদরের রাতে আমরা যে সকল ইবাদত করতে পারি
কোরআন তেলাওয়াত করা
গুনাহ থেকে মাফ চাওয়া
আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের দোয়া- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন, তুহিব্বুল 'আ'ফওয়া ফা 'ফুউ'আআন্নি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
কদরের রাতে এই দোয়া বেশি বেশি পাঠ করতে হবে। এই রাতে যারা বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর ইবাদত করে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন। তাই আমাদের জীবনের সকল পাপ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য এই রাতগুলোতে বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে এবং মন থেকে আল্লাহ কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
বেশি বেশি সালাত আদায় করা
আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ফরজ করে দিয়েছেন। আর এই রমজান মাসে সালাত আদায় করার সাওয়াব আরও বেশি। রাসুল (সা) আমাদের জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে রমজান মাসের এশা ও ফজরের সালাত জামায়াতের সাথে আদায় করার ফজিলত অনেক বেশি।
হাদিসে আছে: যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করে, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে। (মুসলিম হাদিস: ৬৫৬)
সেহেতু আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করা উচিত। তাছাড়া লাইলাতুল কদরের রাত জেগে নামাজ পড়া উত্তম ইবাদত। এই রাতগুলোতে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করা উচিত।
অতিরিক্ত না ঘুমিয়ে বেশি বেশি ইবাদত করা
লাইলাতুল কদরের রাতে আমাদের অতিরিক্ত ঘুম থেকে বিরত থাকতে হবে। অতিরিক্ত না ঘুমিয়ে রাত জেগে ইবাদত করতে হবে। কেননা রাসুল (সা) এই রাতগুলোতে সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং পরিবারের সকলকে নিয়ে এই ইবাদতসমূহ পালন করতেন। তাই এই রাতে না ঘুমিয়ে রাত জেগে আল্লাহর কাছে ইবাদত করতে হবে। এক হাদিসে বর্ণিত আছে যে- যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, অতঃপর সেই রাত রাভ করার তওফিকপ্রাপ্ত হবে, তার পিছনের ও পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে। (মুসনাদে আহমাদ)
মহামান্বিত রাতে ইসলামিক জ্ঞানার্জন করা
বিদায়াত বর্জন করা
কল্যাণের জন্য এই রাতে বেশি বেশি করে দোয়া পাঠ করা
লাইলাতুল কদরের আমল সমূহ
লাইলাতুল কদরের রাত মহামান্বিত একটি রাত। যেই রাত্রের ইবাদত কবুল হলে হাজার বছরের ইবাদতের সমান নেকি বা সাওয়াব লাভ করা যায়। এই রাতে আমরা অনেক অনেক আমল করতে পারি। নিম্নে যেই আমলগুলা আমরা এই রজনীতে করতে পারি তার সংক্ষিপ্ত ধারণা বা কিছু আমলের উল্লেখ করা হলো-
২. বেশি বেশি বাংলা অনুবাদ সহকারে কোরআন তেলাওয়াত করা।
৩. যত বেশি সম্ভব নফল নামাজ আদায় করা।
৪. লা হাওলা ওয়া লা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ পড়া।
৫. সুবহানআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ১০০ বার পড়া।
৬. যত বার সম্ভব আসতাগফিরুল্লাহ পড়া।
৭. বেশি বেশি দুরুদ শরীফ পাঠ করা।
৮. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ২০০ বার পড়া।
৯. সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযীম ১০০ বার পড়া।
শেষ কথা
পরিশেষে বলবো, বিভিন্ন সহিহ হাদিসে বার বার এসেছে, “যে ব্যক্তি রমজান পেলো এবং সে তার পূর্বের পাপগুলো থেকে মুক্তি পেলোনা বা ক্ষয় করতে পারলোনা সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক”। তাই আসুন আমরা সকলেই এই রাতের সঠিক ব্যবহার করি। রমজানে সঠিক ভাবে আল্লাহুর ইবাদাত করি। নিজেকে সকল পাপ থেকে মুক্তি করার চেষ্টা করি। এতে করে ইহকাল ও পরকাল দুটোই আমাদের ভালো হবে ইনশাআল্লাহ।
ABM Creative IT'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url