রমজান মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলওয়াতের ফজিলত
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে সাওম তৃতীয় স্তম্ভ। সাওম আরবি শব্দ। এর বাংলা পারিভাষিক অর্থ সংযম, আত্মনিয়ন্ত্রণ বা বিরত থাকা। রোজা একটি ফারসি শব্দ। গোটা মুসলিম উম্মাহ আরবি রমজান মাসে সাওম বা রোজা পালন করে থাকে। এই মাসেই মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন মাজিদ নাজিল করেছেন।
আর এই কোরআন মাজিদ নাযিল হয় আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর উপর। যিনি আামদের সর্বশেষ নবী ও মানবতার ফেনিওয়লা সেই সাথে ইসলাম প্রচারের মূল বার্তা বাহক। তাই এই মাসে কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত অনেক অনেক বেশি।
পবিত্র কোরআন মাজিদ নাজিল
সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা) এর ওপর মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদ নাজিল করেছেন। নবী ও রাসূল (সা) একদিন মক্কার হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহ ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। এমন অবস্থায় আল্লাহ ফেরেশতা জিবরাঈল (আ)-কে দিয়ে সূরা আলাক্ব এর প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল করলেন। এরপর থেকে আস্তে আস্তে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহ তা’আলা কোরআন মাজিদ নাজিল করতে থাকেন।
পবিত্র কোরআন মাজিদ তেলাওয়াতের ফজিলত
রমজান মাসে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত
রমজান মাসে আল্লাহ কোরআন তেলাওয়াতকারীর জন্য অনেক গুণ সওয়াব বাড়িয়ে দিয়েছেন। রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি আমলের সাওয়াব ৭০ থেকে ৭০০ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এবং প্রতিটি হরফের জন্য ১০ টি নেকি ১০ গুণে পরিণত হয়। এই মাসেই কোরআন মাজিদ নাজিল হওয়ায় এই মাসে কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত অপরিসীম।
আরও পড়ুনঃ ঢাকা জেলার সেহেরী ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৫
রমজানে কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন- রমজান মাস যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে, যা মানুষের হেদায়েত ও সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি সংবলিত সঠিক পথ দেখায় এবং (সত্য ও মিথ্যার মধ্যে) চুড়ান্ত ফয়সালা করে দেয়। (সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১৮৫)
রাসুলুল্লাহ (সা) রমজান মাসে সকল সাহাবায়ে কেরাম ও মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াতের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- রোজা ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আমার রব, আমি তাকে খাবার ও দিবসের প্রবৃত্তি থেকে দূরে রেখেছি। অতএব, আপনি আমার সুপারিশ গ্ৰহণ করুন। আর কুরআন বলবে, হে আমার রব, আমি তাকে রাতের বেলা ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব, আপনি আমার সুপারিশ গ্ৰহণ করুন। তারা এভাবে একে অপরের সুপারিশ করবে। (মুসনাদে আহমাদ; হাদিস ৬৬২৫)
অনেক সাহাবায়ে কেরামগণ কুরআন তেলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে কিছু হাদিস বর্ণনা করার চেষ্টা করা হলো-
১. আবু উমামা বাহেলী (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন- তোমরা কুরআন পড়। কেননা কিয়ামতের দিন কুরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে। (সহিহ মুসলিম; হাদিস ৮০৪)
২. আনাস (রা) হতে বর্ণিত এক হাদিস রাসুল (সা) বলেন- মানবমন্ডলীর মধ্যে আল্লাহর কিছু বিশিষ্ট লোক আছে, আহলে কুরআন ( কুরআন বুঝে পাঠকারী ও তদানুযায়ী আমলকারী ব্যক্তিরা) হলো আল্লাহর বিশেষ ও খাস লোক। ( আহমাদ ১২২৭৯, নাসাঈ, বাইহাক্বী, হাকেম, সহীহুল জামে ২১৬৫)
৩. আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- দুজন ব্যক্তিকে ঈর্ষা করা সিদ্ধ। (১) যাকে আল্লাহ (কুরআন মুখস্থ করার শক্তি) দান করেছেন; সুতরাং সে তার আলোকে দিবা-রাত্রি পড়ে ও আমল করে। (২) যাকে আল্লাহ মাল-ধন দান করেছেন এবং সে আল্লাহর পথে দিন-রাত ব্যয় করেন। (বুখারী ৫০২৫, মুসলিম ১৯৩০)
৪. তামীম দারী (রা) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা) এরশাদ করেন- যে ব্যক্তি এক রাতে একশটি আয়াত পাঠ করবে, সে ব্যক্তির আমল নামায় ঐ রাত্রির কিয়াম (নামাজের) সাওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে। ( আহমাদ ১৬৯৫৮; নাসাঈর কুবরা ১০৫৫৩; দারেমী ৩৪৫০; ত্বাবারানী ১২৩৮)
৫. আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন- কেয়ামতের দিন কোরআনকে বলা হবে তুমি তেলাওয়াত করতে থাক এবং (উপরের দিকে) চড়তে থাক। তুমি উত্তম রুপে তিলাওয়াত করতে থাক। কেননা তুমি যতটুকু পর্যন্ত পড়বে সেখানে হবে তোমার ঠিকানা। (জামে তিরমিযী, হাদিস ২৯১৪)
আরও পড়ুনঃ চট্টগ্রাম জেলার সেহেরী ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৫
৬. ফাযালাহ বিন উবাইদ (রা) বর্ণিত, রাসুল (সা) বলেন- যে ব্যক্তি প্রতি রাতে দশটি আয়াত পাঠ করবে তার জন্য ক্বিন্তার পরিমাণ সওয়াব লেখা হবে। ক্বিন্তার পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত সকল বস্তু হতে শ্রেষ্ঠ। (ত্বাবারণীর কাবীর ১২৩৯, আওসাত্ব ৮৪৫১)
কোরআন তেলাওয়াতের আরও অনেক অনেক ফজিলত আছে, যা বলে হয়ত শেষ করা যাবে না। সুতরাং, আমাদের নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত।
কোরআন তেলাওয়াতকারী ব্যক্তিত্ব
রাসুল (সা) প্রতি রমজান মাসে কোরআন খতম করতেন। অনেক সাহাবায়ে কেরামরা আছেন, যারা নিজেরা কোরআন নিয়মিত তিলাওয়াত করতেন এবং রমজান মাসে তারা আরও বেশি তা তিলাওয়াত করতেন। নবী করীম (সা) নিজে নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করতেন। হাদিসে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সা) কুরআন তেলাওয়াত করতেন আর জিবরাঈল (আ) শুনতেন এবং জিবরাঈল (আ) পড়তেন রাসুল (সা) শুনতেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত এক হাদিসে বলেন- রমজান মাসের প্রতি রাতে জিবরাঈল (আ) রাসুল (সা) এর কাছে উপস্থিত হতেন এবং তারা উভয়েই পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করতেন ও একে অপরকে শোনাতেন। (বুখারী; হাদিস ০৬)
এছাড়াও কাতাদা (রহ.) সাতদিনে একবার কোরআন খতম করতেন। এবং রমজান মাসে প্রতি তিনদিনে একবার কোরআন খতম করতেন। আর শেষ দশ রাত্রি শুরু হলে প্রতি রাতে একবার কোরআন খতম করতেন। (আস সিয়ার ৫/২৭৬)
হযরত ইব্রাহিম নাখায়ি (রহ.) বলে- আসওয়াদ রমজানের প্রতি দুই রাতে একবার কোরআন খতম করতেন। (আস সিয়ার ৪/৫১)
শেষকথা
পবিত্র রমজান মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে। তাই যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াত করেন আল্লাহ নিজে সেই ব্যক্তির মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। তাই আমাদের প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে এবং রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াতের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। তাই আমাদের সকলের প্রতিদিন পবিত্র কোরআন মাজিদ অর্থানুসারে তেলওয়াত করা উচিত মুসলিম হিসেবে, বিশেষ করে রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে জানা ও জ্ঞানার্জন করা এবং তথ্যানুযায়ী আমল করা।
আরও পড়ুনঃ রংপুর জেলার সেহেরী ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৫
ABM Creative IT'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url