কে এই হামজা চৌধুরী - নিজ দেশের মাটিতে পা রেখেছেন হামজা চৌধুরী

কে এই হামজা চৌধুরী? যাকে নিয়ে এখন বাংলাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে এই হামজা চৌধুরি ট্রেন্ডিং এর শীর্ষে থাকা একটি টপিকের নাম। যদিও এই ইংলিশ ফুটবাল তারকা ইতিমধ্যে বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছেন। 

কে-এই-হামজা-চৌধুরী-হামজা-চৌধুরীর-জিবনী

টপিক দেখে হয়তো বুঝতে পারছেন আজকে একজন বিশিষ্ট্য ও খ্যাতি সম্পন্ন ইংলিশ খেলোয়াড় হামজা চৌধুরিকে নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে চলেছি। যাকে বর্তমানে সবাই কৌতুহলী হয়ে আছে। চলুন তাহলে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি। 

জন্ম ও পারিবারিক জীবন

হামজা চৌধুরীর পূর্ণ নাম হামজা দেওয়ান চৌধুরী। হামজা দেওরান চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন ১ অক্টোবর ১৯৯৭ সালে, ইংল্যান্ডের লাফবারোতে। তার বাবা গ্রেনাডিয়ান, আর মা বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের বাসিন্দা। এই দুই সংস্কৃতির সংমিশ্রণে বেড়ে ওঠেন তিনি। তবে তার মধ্যে বাংলাদেশের রক্ত প্রবাহিত হওয়ায় তিনি নিজেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসেবেই পরিচয় দেন।

ব্যক্তিগত জীবন

হামজা চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে খুবই বিনয়ী এবং পরিবার-প্রেমী একজন মানুষ। ২০১৯ সালে তিনি ওলিভিয়া ফাউন্টেইন নামের এক ব্রিটিশ নারীকে বিয়ে করেন এবং তাদের একটি সন্তান রয়েছে।

শৈশব ও ফুটবলের প্রতি আগ্রহ

ছোটবেলা থেকেই হামজা ফুটবলের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তার প্রতিভা দেখে পরিবার তাকে ফুটবলে ক্যারিয়ার গড়তে উৎসাহিত করে। অল্প বয়সেই তিনি স্থানীয় একাডেমিতে খেলা শুরু করেন।

লেস্টার সিটি একাডেমিতে যাত্রা

হামজা মাত্র সাত বছর বয়সে ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব লেস্টার সিটির যুব একাডেমিতে যোগ দেন। সেখানে তিনি তার প্রতিভার ছাপ রাখেন এবং ধীরে ধীরে ক্লাবের সিনিয়র দলে জায়গা করে নেন। বার্টন অ্যালবিয়নে অভিষেক (২০১৬-১৭)। ২০১৬ সালে, মূল দলের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য তাকে ধারে পাঠানো হয় বার্টন অ্যালবিয়ন ক্লাবে। সেখানে তিনি ১৩টি ম্যাচ খেলেন এবং নিজের ডিফেন্সিভ স্কিলের জন্য প্রশংসিত হন।

প্রফেশনাল ক্যারিয়ারের শুরু

২০১৫ সালে, মাত্র ১৮ বছর বয়সে, তিনি লেস্টার সিটির মূল দলে অন্তর্ভুক্ত হন। তবে মাঠে নামার সুযোগ পাননি। ২০১৬ সালে তাকে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বার্টন অ্যালবিয়ন ক্লাবে ধারে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি চমৎকার পারফরম্যান্স করেন। পরে ২০১৭ সালে লেস্টার সিটিতে ফিরে আসেন এবং দলের নিয়মিত সদস্য হয়ে ওঠেন।

লেস্টার সিটির হয়ে উত্থান

২০১৮-১৯ মৌসুম থেকে হামজা লেস্টারের মূল দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন। মিডফিল্ডের ডিফেন্সিভ ভূমিকায় খেলে তিনি ট্যাকলিং দক্ষতার জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তিনি লেস্টারের হয়ে এফএ কাপ ২০২০-২১ জিতেছেন, যা ক্লাবের ইতিহাসে অন্যতম বড় সাফল্য।

এফএ কাপ জয়

২০২০-২১ মৌসুমে, লেস্টার সিটির হয়ে এফএ কাপ জিতেছেন, যা ক্লাবের ইতিহাসে অন্যতম বড় অর্জন। এই শিরোপা জয়ের পেছনে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।

ইংল্যান্ড জাতীয় দলে সুযোগ

তার প্রতিভার কারণে তিনি ইংল্যান্ডের যুব দলে খেলার সুযোগ পান। ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২১ জাতীয় দলের হয়ে তিনি বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলেছেন। তবে ইংল্যান্ডের মূল জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাননি।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার

হামজা চৌধুরী ইংল্যান্ডের হয়ে অনূর্ধ্ব-২১ জাতীয় দলে খেলেছেন, তবে এখনো ইংল্যান্ডের মূল জাতীয় দলে সুযোগ পাননি।

কে-এই-হামজা-চৌধুরী-হামজা-চৌধুরীর-জিবনী

বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার গুঞ্জন

যেহেতু তার মা বাংলাদেশের নাগরিক, তাই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) বহুদিন ধরেই চেষ্টা করছিলো তাকে বাংলাদেশের জাতীয় দলে খেলানোর জন্য। তবে তিনি এখনো নিশ্চিত করেননি তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন কি না। তবে তিনি বাংলাদেশ নিয়ে গর্বিত এবং দেশে এলে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়া হয়। 

বাংলাদেশের হয়ে খেলার সম্ভাবনা

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) বহুদিন ধরে চেষ্টা করছে তাকে বাংলাদেশের জাতীয় দলে খেলানোর জন্য। যদিও এখনো নিশ্চিত নয়, তবে তিনি বাংলাদেশে এলে তাকে নিয়ে বিশাল উন্মাদনা দেখা যায়। তবে শেষ পর্যন্ত জানা গেছে এই হামজা চৌধুরী তার জার্সি নাম্বার সম্পর্কে জানিয়েছে এবং বাংলাদেশে মানে তার নিজ দেশের হয়ে খেলবেন ৮ নং জার্সি নিয়ে। 

খেলার ধরন ও বিশেষত্ব

হামজা চৌধুরী একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। তার খেলার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো-

  • শক্তিশালী ট্যাকল
  • বল কন্ট্রোল
  • মাঠের মাঝখানে প্রতিপক্ষের আক্রমণ থামানো
  • গতিশীল খেলা
  • লম্বা পাস দেয়ার দক্ষতা
  • বর্তমান অবস্থা
কে-এই-হামজা-চৌধুরী-হামজা-চৌধুরীর-জিবনী
বর্তমানে তিনি লেস্টার সিটিতেই খেলছেন, তবে মাঝে মাঝে ধারে অন্যান্য ক্লাবেও খেলতে যেতে পারেন। তার ক্যারিয়ার এখনো তুঙ্গে রয়েছে, এবং সামনে তিনি আরও বড় অর্জন করতে পারেন।

প্রেরণা ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য

হামজা চৌধুরী তার মায়ের বাংলাদেশি পরিচয়কে গর্বের সঙ্গে বহন করেন। তিনি সবসময় বলেন, তিনি তার শিকড়ের কথা ভুলবেন না। ভবিষ্যতে হয়তো তিনি বাংলাদেশের হয়ে খেলতেও পারেন, যা বাংলাদেশি ফুটবল ভক্তদের জন্য দারুণ খবর হবে।

শেষ কথা

হামজা চৌধুরী একজন মেধাবী ফুটবলার যিনি ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেও তার বাংলাদেশি পরিচয় ভুলে যাননি। তার কঠোর পরিশ্রম এবং প্রতিভার জন্য তিনি লেস্টার সিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে আরও বড় কিছু অর্জন করবেন বলে আশা করা যায়। যদিও তার জাতীয় দল নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে, তবে তিনি বাংলাদেশের গর্ব এবং ভবিষ্যতে তার আরও বড় সাফল্য কামনা করা যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ABM Creative IT'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url