বিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক
বিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক প্রথম থেকেই। এরা একজন ছাড়া আরেকজন অসম্পূর্ণ। বিজ্ঞান যেমন কোন কিছু আবিষ্কার বা গবেষণা করতে গেলে পূর্বের বিষয় নিয়ে আগে ভাবতে হয় তেমনি ইতিহাসকে পর্যালোচনা করতে হলে বিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম।
তাই চলুন আজকে বিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক কি তা বিস্তারিত ভাবে আলোচনার মাধ্যমে জেনে আসি। শিক্ষাক্ষেত্রে থেকে শুরু চাকুরির ক্ষেত্রেও এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাই আশা করবো আপনি আজকে এই পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ বিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক
- বিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক
- বিজ্ঞান কি এবং এর সজ্ঞা
- ইতিহাসের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক
- ইতিহাস কেন জানা দরকার
- ইতিহাসের মূল বিষয়বস্তু কি
- ইতিহাসের গুরুত্ব কি
- উপসংহার বা মন্তব্য
বিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক
বহুকাল আগে থেকেই বিজ্ঞানের বেশ চর্চা হয়ে আসছে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এই বিজ্ঞান আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে কলকারখানায় পর্যন্ত এনে দিয়েছে আধুনিকতার ছোয়া। আমাদের কর্মের সাথে এই বিজ্ঞান এমন ভাবে মিশে গেছে যে, এখন এই বিজ্ঞান ছাড়া আমরা এক মূহূর্তও ভাবতে পারিনা। আসলে ইতিহাসকে বিজ্ঞানের অনুরূপ জ্ঞান হিসেবে প্রকাশ করা হয় কারণ, বিজ্ঞান পর্যালোচনা করে নতুন নতুন তথ্য প্রদান করে থাকে। ক্ষেত্র আলাদা হলেও বৈশিষ্ট্যগত ভাবে এরা একই।
আরও পড়ুনঃ ভ্রমণের পূর্বে যেই বিষয়গুলি সম্পর্কে জানা থকতে হবে
আর ইতিহাস তো সেই বিজ্ঞানের আলোকেই পর্যালোচনা করা হয়েছে। যদিও বা অনেকেই মনে করে থাকে ইতিহাসকে পর্যালোচনা করার জন্যই বিজ্ঞানের উদ্ভব হয়।বিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত ও ভালো ভাবে জানতে হলে আমাদেরকে বিজ্ঞান এবং ইতিহাস এই দুইটা সম্পর্কেই ধারণা থাকতে হবে। চলুন আমরা তো বিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক কি সেইটা জানতে পেরেছি এইবার বিস্তারিত ভাবে জেনে আসি।
বিজ্ঞান কি এবং এর সজ্ঞা
ল্যাটিন শব্দ সায়েনটিয়া থেকে ইংরেজি সায়েন্স শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শব্দটির অর্থ বিশেষ জ্ঞান। ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার ফলে কোন বিষয়ে প্রাপ্ত ব্যাপক ও বিশেষ জ্ঞানের সাথে জড়িত ব্যক্তি বিজ্ঞানী বিজ্ঞানবিদ কিংবা বৈজ্ঞানিক নামে পরিচিত হয়ে থাকেন।বিজ্ঞানীরা বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে জ্ঞান অর্জন করেন এবং প্রকৃতি ও সমাজের নানা মৌলিক বিধি ও সাধারণ সত্য আবিষ্কারের চেষ্টা করেন। বর্তমান বিশ্ব এবং এর প্রগতি নিয়ন্ত্রিত হয় বিজ্ঞানের মাধ্যমে। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যাপক অর্থে যেকোনো জ্ঞানের পদ্ধতিগত বিশ্লেষণকে বিজ্ঞান বলা হলেও এখানে বিশেষায়িত ক্ষেত্রে শব্দটি ব্যবহার করা হবে।
বিজ্ঞান চর্চার সূত্র সুদূর অতীত ৩০০০ থেকে ১২০০ বিসিই সময়কালে প্রাচীন মিশর এবং মেসোপটেমিয়ায় পাওয়া যায়। তাদের গণিত জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের জ্ঞান পরবর্তীতে গ্রিক ধ্রুপদী সভ্যতার দর্শনশাস্ত্রে প্রভাব রাখে তার পাশাপাশি প্রাকৃতিক কারণগুলোর উপর ভিত্তি করে বস্তুজগতকে ব্যাখ্যা করার সাধারণ প্রচেষ্টাও ছিল। পশ্চিমা রোমান সম্রাজ্য পতিত হবার পর পশ্চিমা ইউরোপ গ্রিকের পৃথিবী সম্পর্কিত জ্ঞান কমতে থাকে যা মধ্যযুগের ৪০০ থেকে ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ছিল। পরে ইসলামিক স্বর্ণযুগে তার সংরক্ষিত হয়।
১০ম থেকে ১৩শ শতাব্দিতে গ্রিকদের জ্ঞান এবং পশ্চিম ইউরোপের থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান একত্রে পুর্নজাগরিত হয় “প্রাকৃতিক দর্শন” হিসেবে। যা ১৬শ শতকে শুরু হওয়া বৈজ্ঞাসিক বিপ্লবের সময় থেকে রূপান্তরিত হতে থাকে। সেই সময় নতুন নতুন আবিষ্কার ও চিন্তাধারার কারণে গ্রিকদের ধারণা এবং চেতনার থেকে তা আলাদা পথে ধাবিত হয়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি জ্ঞান সৃষ্টির ক্ষেত্রে দ্রুতই বড় ধরনের ভূমিকা পেতে লাগল। ১৯শ শতকের মধ্যেই অনেক পেশাগত এবং বিদ্যাগত বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা পরিপূর্ণ রূপ পেতে শুরু করে।
২. সামাজিক বিজ্ঞান, যা মানবিক আচরণ ও সমাজের অধ্যয়ন করে,
আরও পড়ুনঃ কিভাবে ঘরে বসেই মেয়েরা ইনকাম করবে
জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নসহ ধরনের সকল বিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে মানুষের আচার-ব্যবহার এবং সমাজ নিয়ে যে বিজ্ঞান তা সমাজ বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। তবে যে ধরনেরই হোক, বিজ্ঞানের আওতায় পড়তে হলে উক্ত জ্ঞানটিকে সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণিত হতে হবে। আর একই শর্তের অধীনে যে গবেষকই পরীক্ষণটি করুন না কেন ফলাফল একই হতে হবে। অর্থাৎ ব্যক্তি চেতনা অনুযায়ী বিজ্ঞানভিত্তিক পরীক্ষণের ফলাফল কখনও পরিবর্তিত হতে পারে না।
বিজ্ঞান গবেষণার উপর নির্ভর করে। গবেষণাগুলো সাধারণত বিজ্ঞানীদের দ্বারা শিক্ষাক্ষেত্রে এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে, সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং কোম্পানিভিত্তিক উদ্যোগে করা হয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণার বাস্তবিক প্রভাব বৈজ্ঞানিক নীতি গ্রহনে বাধ্য করেছে। বৈজ্ঞানিক নীতি দ্বারা বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রভাবিত করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনসার্থে ব্যবহৃত পন্য, স্বাস্থ্যসেবা, জন কাঠামো, পরিবেশের সুরক্ষা এবং অস্ত্র তৈরির মত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে নীতিমালা অনুসরন করানো হয়।
গণিতকে অনেকেই আলাদা একটি শ্রেণি হিসেবে দেখেন। অর্থাৎ তাদের মতে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান আর গণিত এই তিনটি শ্রেণি মিলে বিজ্ঞান। ঐ দৃষ্টিকোণে গণিত হলো আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান আর প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞান হলো পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞান। প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের সাথে গণিতের মিল-অমিল উভয়ই রয়েছে। গণিত একদিক থেকে পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, উভয়টিই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে পদ্ধতিগত অধ্যয়ন করে।
আর পার্থক্য হচ্ছে, পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানে পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণ করা হলেও গণিতে কোনো কিছু প্রতিপাদন করা হয় আগের একটি সূত্রের ওপর নির্ভর করে। এই আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান, যার মধ্যে পরিসংখ্যান এবং যুক্তিবিদ্যাও পড়ে, অনেক সময়ই পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানে উন্নতি করতে হলে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞানের প্রসার আবশ্যক। কীভাবে কোনো কিছু কাজ করে (প্রাকৃতিক বিজ্ঞান) বা কীভাবে মানুষ চিন্তা করে (সামাজিক বিজ্ঞান) তাই আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করে।
আধুনিক যুগের পূর্বে ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক সভ্যতায় বিজ্ঞান ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হত। আধুনিক বিজ্ঞান পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র এবং ফলাফলের মধ্যে সফল তাই বিজ্ঞান বলতে কি বোঝায় তা এখন পরিষ্কার এবং কঠোরভাবে সংজ্ঞায়ীত ।
বিজ্ঞান শব্দটি উৎপত্তিগতভাবে এক ধরনের জ্ঞান বোঝাতো কিন্তু বিজ্ঞান সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন বুঝাতো না । বিশেষ করে, এটি ছিল এক ধরনের জ্ঞান যা মানুষের একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যবহৃত হত। উদাহরণস্বরূপ, প্রাকৃতিক বিষয়গুলির জ্ঞান লিপিবদ্ধ হবার পূর্বেই এগুলো সংগৃহীত হয়েছিল এবং জটিল বিমূর্ত ধারণাগুলির উন্নয়ন ঘটেছিল । এটি ছাপ দেখা যায় জটিল ক্যালেন্ডার নির্মাণ, কৌশল ব্যবহার করে বিষাক্ত উদ্ভিদকে খাবার উপযোগী করে তোলা, জনমানুষের জন্য জাতীয় পর্যায়ে কাজ করা যেমন প্লাবনভূমি থেকে বাধেঁর মাধম্যে জলাধার নির্মান এবং পিরামিডের মতো ভবন তৈরী করা।
যাইহোক, এই ধরনের জিনিসগুলির জ্ঞানের মধ্যে কোন সঙ্গতিপূর্ণ বিশিষ্ট পার্থক্য তৈরি করা হয়নি যা প্রতিটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সত্য। সেই সাথে অন্যান্য ধরনের সাম্প্রদায়িক জ্ঞানের মতো বিষয়, যেমন: পৌরণিক কাহিনী এবং আইনি ব্যবস্থা ইত্যাদির বেলাও তা সত্য। ধাতুবিদ্যা পূর্বেও জানা ছিল এবং ভিনট্ফাক সংস্কৃতিতে ব্রোঞ্জের মত পদার্থ তৈরির জ্ঞান জানত। মনে করা হয় পূর্বে কোন বস্তু গরম করে গলিয়ে সেটার সাথে অন্যকোন উপাদান, পদার্থ যোগ করে অন্য একটি ধাতু তৈরির যে জ্ঞান সেটাই ধীরে ধীরে আলকেমি নামে পরিচিত হয়।
ইতিহাসের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক
ইতিহাস কেন জানা দরকার
ইতিহাসের মূল বিষয়বস্তু কি
ইতিহাসের গুরুত্ব কি
এটি আমাদের অতীতের একটি কালানুক্রমিক এবং পদ্ধতিগত বিবরণ দেয়৷ এটি ইতিহাস অধ্যয়ন করা প্রয়োজন কারণ এটি আমাদের অতীতকে প্রকাশ করে, আমাদের বুঝতে সাহায্য করে আমরা কে, আমরা কোথা থেকে এসেছি এবংসম্ভবত আমরা কোথায় যাচ্ছি তা প্রকাশ করতে পারে।সলে অধ্যয়ন আমাদের অতীত আমাদের আরও একটি ভবিষ্যত তৈরি করার সুযোগ দেয়।
- পরিশেষে বলা যায়, ইতিহাস ছাড়া আমরা কোন ভাবেই একটি সম্পূর্ণ জাতি হিসেবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করতে পারতাম না। আমরা পূর্বের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী জীবনে কাজে লাগিয়েছি যার ফলে আমরা আজকের এই জাতি হিসেবে উন্নিত হয়েছি।
উপসংহার বা মন্তব্য
বিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক অনেকটাই মেঘের সাথে বৃষ্টির মতো। মেঘ ছাড়া যেমন বৃষ্টি হয়না তেমন ইতিহাস ছাড়া বিজ্ঞান আর বিজ্ঞান ছাড়া ইতিহাস অচল। এরা একে আরেকজনের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে থাকে। এই দুইটাই আমাদের জীবনের সাথে সম্পৃক্ত। এদেরকে ছাড়া একটি মূহুর্তও ভাবা যায়না। বিজ্ঞানকে অস্বীকার করা যায়না আর ইতিহাসকে ভুলা যায়না। অতীতকে স্মরণ করেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয় এতে করে অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে উন্নতি করা যায়। আশা করি আজকের এই পোস্টটি আপনার এই ধারণার উন্নতি ঘটাবে।
পরিশেষে বলি, আজকের এই পোস্টটি থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে যদি আমরা শিক্ষার জন্য এই পোস্টটি পড়ে থাকি তবে আমাদের ধরাণাটি আরো প্রখর হবে। এই দুইটাকেই কেন্দ্র করে যত বিষয় ঘিরে আছে। আপনার বাস্তব জীবনকে প্রভাবিত করবে। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন এবং সুন্দর থাকবেন। লিখার মধ্যে কোন ভুল থাকলে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আসসালামু আলাইকুম।
ABM Creative IT'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url