১লা ফাল্গুন ২০২৫ ইংরেজি তারিখ

১লা ফাল্গুন ২০২৫ ইংরেজি তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারী শুক্রবারের দিন। বাংলা সন ১৪৩১ খ্রিষ্টাব্দ। এই দিনটিতে আরো একটি দিবস রয়েছে যেইটা পুরো বিশ্ব মনে রাখে এবং খুব জমজমাট করে উদযাপন করে থাকে।
১লা-ফাল্গুন-২০২৫-ইংরেজি-তারিখ

দিনটি হলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবস যাকে ভ্যালেন্টাইন দিবস দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আসুন তাহলে ১লা ফাল্গুন ২০২৫ ইংরেজি তারিখ ও বার বিস্তারিত জেনে রাখি। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ ১লা ফাল্গুন ২০২৫ ইংরেজি তারিখ 

১লা ফাল্গুন ২০২৫ ইংরেজি তারিখ

১লা ফাল্গুন ২০২৫ ইংরেজি তারিখ গণণা করলে দেখা যাবে দিনটি শুক্রবারের দিন। যেই দিনটি ইংরেজি তারিখ অনুসারে ১৪ ফেব্রুয়ারী হচ্ছে। দিনটিকে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মুসলিমদের জন্য একটা বিশেষ দিন। যদিও এই দিনটি আরো দুইটি বিশেষ দিন হিসেবে পরিচিত। ১লা ফাল্গুন যেইটাকে বাংলায় বসন্তবরণ বলা হয় এবং অন্যটি হলো ১৪ই ফেব্রুয়ারী ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ভ্যালেনটাইন দিবস বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। 

আরও পড়ুনঃ শীতের সকালে খেজুর রসের গুণাগুণ

এই বিশেষ দিনটি এতো বেশি প্রাধান্য পাওয়ার পিছনে এই দুইটাই কারণ। একি দিনে দুইটা উৎসব এবং এর মধ্যে একটা আমাদের দেশীয় উৎসব এবং আরেকটি বিশ্বব্যাপী উৎসব বা আন্তর্জাতিক উৎসবও বলা যায়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এই দুই উৎসবে এই দিনটিকে আরো স্মরণীয় করে তোলে বাংলার মানুষ। গ্রাম থেকে শুরু করে শহর পর্যায়ে এর প্রভাব খুব প্রখর আকারে দেখা যায়। 

১লা ফাল্গুন বা বসন্তবরণ আসলে কি

১লা ফাল্গুন বা বসন্তবরণ আসলে কি? সেইটা যদি না জানি তাহলে সর্বপ্রথম আমাদের উচিত নিজ ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে আগে ভালোভাবে জানা। আমরা বাঙালি হয়েও যদি নিজেদের ঐতিহ্যকে লালন করতে না পারি তাহলে এর থেকে হতভাগা জাতি আর কেউ হবেনা। আমাদের এই দেশ ৬টি ঋতুর দেশ। আর এই ঋতুগুলো ৬ মৌসুমে ৬ ধরনের রুপ বৈচিত্র নিয়ে আমাদের মাঝে আসে আবার সময় হলে চলে যায়। প্রতিবছরেই এই ঋতু পরিবর্তন হয়ে আর পূণরায় সেই আগের অবস্থাই বার বার বছর ঘুরে ফিরে আসে।

আমরা বাঙালিরা এই ঋতুগুলোর সাথে মিল রেখে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে অনেক রকম অনুষ্ঠান করে থাকি যেইগুলোকেই আসলে বাংলার প্রাণ ও ঐতিহ্য বা সংস্কৃতি বলে থাকি। বাংলার ফাল্গুন ও চৈত্র মাস এই দুইট মিলে বসন্ত ঋতুর বৈচিত্রময় নানা রকম বাহারি সাজ আমরা উপভোগ করি। এই বসন্ত ঋতুতে এই সবুজ-শ্যামলা, সুজলা-সুফলা প্রকৃতি তার নতুন রুপ দিয়ে চারিদিকে ফুলে ফুলে ভরিয়ে তোলে। যার কারণে এই সুন্দর একটা ঋতুকে আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বরণ করে থাকি। 

আর সেই জন্যেই এই ঋতুর প্রথম মাস ফাল্গুনের প্রথম দিনেই এই বসন্তবরণ উৎসব করা হয়। পুরো বাংলাদেশ জুড়ে এই বসন্তবরণের উৎসবে সবাই মেতে উঠে বিভিন্ন রকম রঙিন পোশাকে এবং সেই সাথে কেই বা মাথায় ফুল দিয়ে আবার কেই হাতে আবার শরীরে বিভিন্ন রকম ভাবে নানা রকম সাজ-সজ্জায় প্রকৃতির এই রূপের খেলার উদযাপন করে থাকে। তবে আমাদের দেশের এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ থাকে বাংলার নারীদের উপর। তারাই এর পূর্ণতা দিয়ে থাকে। 

বাংলায় বসন্তবরণ কেমন হয়ে থাকে

বাংলায় বসন্তবরণ কেমন হয়ে থাকে এইটা যদি না দেখে থাকেন তাহলে আপনি কোন ভাবেই এই উৎসব সম্পর্কে ধারণাও করতে পারবেন না। ১লা ফাল্গুনে এই দিনটি বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়ে থাকে। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য হিসেবে নানা রকম বাহারি খাবারের আয়োজন করা হয় সেই সাথে গ্রামের নববধু থেকে শুরু সকল পর্যায়ের মেয়েরাই বিভিন্ন ভঙ্গিমায় নতুন ফুল দিয়ে নিজেদেরকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করে থাকে। 

আসলে বাংলায় বসন্তবরণ এমনি হয়ে থাকে। বসন্ত মানেই নানা রকমের ফুলের বাহার এবং নতুন ফুলের গন্ধু চারিদিকে সুবাস ছড়ায় সেই সাথে কোকিলের মধুর সুরের ডাক কানে ভেসে আসে। এই উৎসবটি শহরাঞ্চলের দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাওয়া যায় হলুদ ও লাল রঙরে মিশ্রণে চারিদিকে বাহারি রকমের পোশাকের সমারোহ ছেলে ও মেয়েদের পরোণে। আবার মেয়েরা মাথায়, হাতে, গলায় বিভিন্ন ভাবে ফুলের সৌন্দর্য ফুটে তুলেছে। 

এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি প্রকাশ পায়। যখন এইরকম চোখের সামনে দেখতে পাবেন তখনই আসলে বুঝতে পারবেন যে বাংলায় এই বসন্তবরণ কেমন হয়ে থাকে এবং এই মৌসুমে বাংলার রুপ-বৈচিত্র ও প্রকৃতি কেমন হয়ে থাকে। এতো সুন্দর সবুজ গাছপালা আর সেই গাছপালাতে ফুটে আছে বিভিন্ন রকমের বাহারি ফুল যা দেখলে মন জুড়িয়ে আসে। চারিদিকে কেমন জানি অজানা এক শক্তি আপনাকে আকৃষ্ট করবে। এই রকম প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম পরিবেশ দেখলে এই দেশের প্রেমে পড়তে আপনি বাধ্য হবেন।  

বাংলাদেশ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির দেশ 

বাংলাদেশ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির দেশ হিসেবে বিশ্বে অনেক খ্যাতি অর্জন করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যার অর্থনৈতিক প্রধান শক্তি কৃষি। এমন একটা দেশে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিস্তার ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। এদেশের কৃষকরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের অনুষ্ঠান বা আয়োজন করে থাকে তাদের বিভিন্ন ফসলের সাথে মিল রেখে। আর এইগুলোর সাথেই মিল রেখে একটা অনুষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে নবান্ন উৎসব। যা নতুন ধানের আমেজে পালন করা হয়ে থাকে।

এইরকম আরো অনেক উৎসব আছে যেইগুলো আমাদের এই দেশে উদযাপন করা হয়ে থাকে।গ্রাম থেকে শহর প্রত্যেকটা জায়গাতেই এইসব উৎসবের মিলনমেলা ঘটে থাকে। যেই দেশে ঋতু পরিবর্তনের জন্য উৎসব করা হয় সেই দেশ কতটা সুখি এবং সংস্কৃতিমনা সেইটা বোঝায় যায়। আর এই দেশপ্রেম এর জন্যই এদেশের মানুষরা তাদের এইসব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে এবং সেই সাথে এইটাকে লালনও করে থাকে। 

বসন্তকালে বাংলার প্রকৃতি, রুপ ও বৈচিত্র

বসন্তকালে বাংলার প্রকৃতি ও রুপ-বৈচিত্র বিভিন্ন রকম ভাবে খেলা করে। চারিদিকে শুধু রঙের বাহার সেই সাথে প্রতিটি গাছে নতুন পাতা গজাঁয়। তার সাথে অনেক গাছে নতুন মুকুল আসে ফলের জন্য। ফুল আর ফলে ভরে উঠে এই মৌসুম। মৃদু হাওয়া বয়ে আসে এই সময় তার সাথে নিয়ে আসে বিভিন্ন ফুলের সুবাস ছড়ানো গন্ধ যা আপনাকে মনোমুগ্ধকর করে তুলবে।

আরও পড়ুনঃ অ্যালোভেরা গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

বসন্তকালে বাংলা প্রকৃতি ও রুপ-বৈচিত্র এতো সুন্দর হয়ে উঠে চারিদিকে যে আপনি যেইদিকেই তাকাবেন মনটা ভরে যাবে এই রুপের লীলাভুমি দেখে। বাস্তবিক অর্থে এই বসন্তকালের আগেই হয়তো অনেক গাছে ফুল চলে আসে এইটা প্রকৃতির কিছু পরিবর্তনের কারণে এমনটা ঘটে। তাছাড়া জলবায়ুগত কারণে অনেক ফুল ও ফল সারা বছরেই ফুটে যার কারণে বসন্ত আসার আগেই হয়তো এইসব গাছে ফুল ও ফল চলে আসে। কিন্তু এই মৌসুমের প্রধান ঋতু হলো বসন্তকাল। 

১৪ ফেব্রুয়ারী বিশেষ দিন কেনো

১৪ ফেব্রুয়ারী বিশেষ দিন কেনো? আসলে এই দিনটি একদিকে যেমন ১লা ফাল্গুনের জন্য অনেক বড় এবং বিশেষ দিন তেমনি ইংরেজি মাসের গণণায় এই ১৪ ফেব্রুয়ারীকে বলা হয়ে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ইংরেজিতে ভ্যালেন্টাইন ডে। এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যার কারণে এই দিনটি এতো গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ দিন। এই দিনকে কেন্দ্র করেই এতো এতো পরিমাণ ফুল বিক্রি করে থাকে ফুলের দোকানিরা তার উপরে আবার এই বছরেও ১লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস একসাথে আর এই দুইটা দিবসই ফুলের উপরে নির্ভরশীল।

১৪-ফেব্রুয়ারী-বিশেষ-দিন-কেনো

আমরা যদি দেখি এই দিনে সবাই তার প্রিয়জনদেরকে ভালোবেসে ফুল উপহার স্বরুপ দিয়ে থাকে অন্য দিকে ১লা ফাল্গুনেও সবাই ভালোবেসে ফুল উপহার দিয়ে থাকে। ভালোবাসা উপস্থাপনা করার মূল বস্তু হিসেবেই ধরা হয়ে থাকে ফুলকে যার চর্চা সারা বিশ্ব জুড়েই। এই দিনে সবাই সকলের মনের মানুষ, প্রিয়জন, ভালোবাসার মানুষদেরকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। সেইটা হতে পারে তার বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, বন্ধু-বান্ধবী ইত্যাদি। 

আরও পড়ুনঃ রক্ত আমাশয়ের ঘরোয়া চিকিৎসা

মন্তব্য বা উপসংহার

১লা ফাল্গুন ২০২৫ ইংরেজি তারিখ এবং বাংলা তারিখ কোন সময়ই এক হয়না এর কারণ দুইটা দুই ভাবে গণণা করা হয়ে থাকে। তবে ইংরেজি তারিখ অনুসারে গণণা করে অনেক সময় বাংলা গণণার সাথে বিভিন্ন বিশেষ দিনের মিল পাওয়া যায় আর তারই একটা প্রধান উদাহরণ ১লা ফাল্গুন বসন্তবরণ উৎসব এবং ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে। 

পরিশেষে বলা যায় যে, উক্ত পোস্টের মধ্যে আমি নির্দিষ্ট কোন ধর্ম বা জাতিকে আঘাত করে কিছু বলিনি এরপরেও যদি আমার লিখনির মধ্যে কোন প্রকার ভুল বা লিখার মাধ্যমে কষ্ট পেয়ে থাকে অথবা ধর্মীয় আঘাত হানে তাহলে ক্ষমাসূলভ দৃষ্টিতে দেখবেন। সেই সাথে আমার সেই ভুলটি কমেন্ট এর মাধ্যমে আমাকে পরামর্শ হিসেবে বলে যাবেন। আর ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ABM Creative IT'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url