ওজন কমানোর সর্বোত্তম কয়েকটি উপায়
শরীরের বাড়তি ওজন নিয়ে আজকাল অনেকেই চিন্তিত। নিজের ওজনটা কমিয়ে সকলেই মেদহীন
ও ফিট থাকতে চান। সুস্বাস্থ্যের জন্য তো বটেই, শারীরিক সৌন্দর্যের জন্যও নারী
পুরুষ উভয়েই ভাবেন ওজন কমাবেন। কিন্তু কর্মব্যস্ততা এবং সময় স্বল্পতার কারণে
ওজন কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যায়াম বা ডায়েট করা হয়ে ওঠেনা। অথচ কিছু সহজ
কৌশল অবলম্বন করলে বাড়তি ওজন কমানো কিন্তু অতটাও কঠিন নয়। আপনিও পারবেন খুব
সহজেই ওজন কমাতে।
আরও পড়ুনঃ থানকুনি গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা
ওজন কমানোর জন্য আপনাকে শুধু কিছু নিয়ম বা টিপস মেনে চলতে হবে। আশা করি এই
নিয়মগুলো যদি আপনি সঠিক ভাবে ফলো করতে পারেন তাহলে ইন-শা-আল্লাহ আপনিও আপনার
অতিরিক্ত মেদ কমানোর ক্ষেত্রে সফল হবেন। আর যার ফলে আপনার শরীরের অতিরিক্ত
ওজন কমানোও খুব সহজে হয়ে যাবে। আমাদের প্রধান সমস্যা হলো আমরা কিছুদিন নিয়ম
অনুসরণ করে আর সম্ভব হয়না আমাদের ধৈর্যে। যার ফলে আর আমাদের ওজন আগের মতোই
থেকে যায়। আসুন তাহলে আজকে ওজন কমানোর সর্বোত্তম কয়েকটি উপায় সম্পর্কে
বিস্তারিত জানি।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন
শরীরের চর্বি কমাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে পানি। পানি শরীরে
জমে থাকা চর্বি এবং শর্করাকে হজমের মাধ্যমে শরীর থেকে আলাদা বা বের করে দিতে
সক্ষম। তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে শরীর আর্দ্র থাকে, এতে পেট ভরা
থাকে এবং ক্ষুধাও কম লাগে। এ কারণে আমাদের খাবার কম খাওয়া উচিত এবং প্রচুর
পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন। এতে করে আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজনও কমতে
সহায়তা করবে। তাই দিনে অন্তত ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি এবং ফলমূল খান
শাকসবজি এবং ফলমূলে চর্বির পরিমাণ নেই বললেই চলে এবং শর্করার পরিমাণ খুবই কম
থাকে। খাবারের চর্বি ও শর্করা শরীরে মেদ জমার অন্যতম কারণ। শাকসবজি এবং
ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার থাকে। যার কারণে এইসব খাবার খেলে শরীরের
অতিরিক্ত ওজন কমে থাকে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বেশি বেশি শাকসবজি এবং
ফলমূল রাখা খুবই প্রয়োজন। সবজির মধ্যে রয়েছে আমাদের দেহের অতি প্রয়োজনীয়
ভিটামিন, খনিজ উপাদান এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা শরীর সুস্থ্য রাখতেও
সাহায্য করে থাকে।
নিয়মিত পরিমাণ মতো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাবেন
ওজন কমানোর সর্বোত্তম কয়েকটি উপায় এর মধ্যে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার
প্রয়োজনীয়তা বেশি লক্ষ্যণীয়। বেশি বেশি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায়
রাখতে হবে। এতে করে শরীরের চর্বি দ্রুত কমে যাবে এবং পেশি স্বাস্থ্যকর হবে।
প্রোটিন জাতীয় খাবার কম খেলে শরীরে এর অভাবে বাজে প্রভাব পড়বে। তাই বেশি বেশি
মাংস, ডিম, দুধ, এবং ডাল খাদ্য তালিকায় পরিমাণ মতো নিয়মিত রাখা দরকার। তবে
চর্বিযুক্ত মাংস এড়িয়ে চলতে হবে।
মিষ্টিজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন
ওজন কমানোর সর্বোত্তম কয়েকটি উপায় এর মধ্যে মিষ্টিজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকা
অন্যতম একটি কারণ বলা চলে। চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন।
পাশাপাশি শর্করা জাতীয় খাবার যেমন- ভাত এবং রুটি কম করে খেতে হবে। এসব খাবার
কম খেলে ওজন দ্রুত কমবে। তবে মিষ্টি জাতীয় খাবার আমাদের মাঝে মধ্যে পরিমাণ
মতো খেতে হবে তাছাড়া শরীরের সুগারের পরিমাণ কমে যাবে আর েএই পরিমাণ নীল
হয়ে গেলে মানুষ মৃত্যুবরণও করতে পারে। তাই একেবারে বাদ না দিয়ে পরিমাণ মতো
প্রয়োজন অনুসারে খেতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ লেবুর খোসা খেলে কি হয়
সঠিক মাত্রায় ক্যালরি গ্রহণ করুণ
আপনার শরীরের জন্য কতটুকু ক্যালরি দরকার সেই অনুযায়ী ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার
নিয়মিত প্রতিবেলার খাবারের সাথে রাখুন এবং সেইগুলো খান। প্রয়োজনের চেয়ে কম
অথবা বেশি খেলে আপনার কাঙ্খিত ফল কখনই পাবেন না। তাই কাঙ্খিত ফলাফল পেতে হলে
আপনাকে অবশ্যই অবশ্যই পরিমাণ মতো এবং নিয়ম অনুসারে এইসব পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার
খেতে হবে। প্রয়োজনে আপনি একজন রেজিষ্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
কোন বেলার খাবার বাদ দেওয়া যাবে না
আপনি যদি এইসব নিয়ম মেনে শরীরের ওজন কমানোর জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকেন মনে
মনে, তাহলে আপনাকে অনুরোধ করে বলবো কখনো না খেয়ে থাকবেন না। এতে করে আপনার
শরীর আরো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। কোন বেলার খাবার বাদ দিয়ে বা না খেয়ে ওজন
কখনোই কমানো যায় না। এতে ওজন তো কমবেই না বরং আপনি আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়বেন।
তবে একেবারে খুব বেশি না খেয়ে অল্প পরিমাণ খাবার কয়েক বারে ভাগ করে খাবেন।
এতে করে আর কোন সমস্যার সম্মুখিন হতে হবেনা আপনাকে।
খাওয়ার পর মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকুন
আগেই বলা হয়েছে মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকাই ভালো। তবে আপনার প্রয়োজন
অনুসারে পরিমাণ মতো আপনি খাবেন। কিন্তু এর বাইরে আপনি স্বাদের লোভে অতিরিক্ত
মিষ্টি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আমাদের অনেকেরই খাওয়ার পরে একটু মিষ্টি জাতীয়
খাবার খাওয়ার অভ্যাস আছে। মিষ্টি জাতীয় খাবার বা পানীয় অনেক অনেক বাড়তি
ক্যালরি জোগান দিয়ে থাকে। তাই এই অভ্যাসটি আপনাকে একেবারেই পরিহার করতে হবে।
এছাড়া আপনার ডায়েট কন্ট্রোলে বিঘ্ন ঘটাবে। আপনি যতই চেষ্টা করেন না কেনো
ফলাফল শেষে গিয়ে শূন্যই আসবে।
ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবারকে না বলুন
ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবারকে না বলুন! এইটাকে না বলার জন্য কোন প্রকার বাধা এবং
প্রশ্ন বা দিধা ছাড়াই না বলুন। কারণ, ফাস্ট ফুড কখনোই ভালো ফলাফল আনতে পারেনা
শরীরের জন্য। বরং দিনে দিনে আপনার শরীরকে আরো খারাপ করে দিবে এবং আপনাকে আরো
মোটা ও ওজন বৃদ্ধি করে দিবে। তাই প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়,
সোডা ইত্যাদি খাবারগুলোকে একেবারে না বলুন। এই খাবারগুলোতে তেল, শর্করা এবং
ক্যালরির পরিমাণ খুবই বেশি থাকে। যার কারণে আপনার শরীরের ওজন খুব দ্রুত বেড়ে
যায়।
প্রতিদিন রুটিন করে হাঁটা হাঁটি করুণ
ওজন কমাতে হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। আর হাঁটা তো কেবল ওজনই কমাবে না, কমাবে
ডায়াবেটিকস এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট নিয়ম
করে হাঁটা হাঁটি করুণ। বিষন্নতা বা মন খারাপ ভাব ও কমে যাবে প্রতিদিন হাঁটা
হাঁটি করলে। আমাদের শরীরের ফিটনেস ধরে রাখতে এবং শরীরকে ঠিক রাখতে আমাদের
প্রত্যেকেরই নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা প্রয়োজন। প্রতিদিন সকালে অথবা বিকালে যদি
হাঁটাহাঁটি করা যায় তাহলে কাজ করার জন্য মানসিকতাটাও ফুরফুরে থাকে।
মাঝে মধ্যে গ্রিন-টি পান করুণ
কোমল পানীয়, মিষ্টি জুস, কালো চা এইসব খাবার তালিকা থেকে বাদ দিন। শুধুমাত্র
গ্রিন-টি পান করুন। গ্রিন-টি শরীরকে মেদমুক্ত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে
থাকে। তবে মনে রাখবেন গ্রিন-টি অবশ্যই চিনি ছাড়া তৈরি করতে হবে। তাছাড়া ওজন
কমানোর গতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এছাড়াও শরীরের ওজন কমানোর জন্য দৈনিক
কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুমানো দরকার, কারণ পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের মেটাবলিজম বা হজম
বাড়িয়ে দেয়। তাই মাঝে মধ্যে গ্রিন-টি পান করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ অ্যালোভেরা গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা
মন্তব্য
ওজন কমানোর সর্বোত্তম কয়েকটি উপায় নিয়ে আজকে আপনাদের মাঝে এই পোস্টটি করা
হয়েছে। আশা করি এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা অনেকেই উপকৃত হবেন। এই পোস্টে
উল্লেখিত সকল তথ্য আপনাদের জন্য রিসার্চ করে বের করেছি যেনো আপনারা সঠিক তথ্য
পেয়ে থাকেন। সকলেই চায় তার নিজের ওজন স্বাভাবিক এবং কন্ট্রোলে থাকুক। কিন্তু
অনেক সময় দেখা যায় কোন কারণবশত আবার কারণ ছাড়াই আপনার ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে! এই
রকম হলে অবশ্যই এই নিয়মগুলো ফলো করতে পারেন। অথবা রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তারের
পরামর্শ নিতে পারেন।
পরিশেষে বলতে চায়, আজকের এই লিখনির মধ্যে কোন প্রকার ভুল তথ্য বা এমন কোন
লিখনি বা কথা দ্বারা যদি কেউ মনে আঘাত পেয়ে থাকেন তাহলে ক্ষমা করবেন। এছাড়াও
যদি পোস্টে কোন ভুল তথ্য পেয়ে থাকেন তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে অবশ্যই জানানোর
জন্য অনুরোধ করছি। আশা করি আপনার গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে আরো শিখবো এবকং
ভুলগুলো সংশোধন করার সুযোগ পাবো। সকলে সুস্থ্য ও সুন্দর থাকবেন এই প্রত্যাশা
নিয়ে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি আসসালামু আলাইকুম।
ABM Creative IT'র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url